কুয়াশাচ্ছন্ন শীতের সকাল
কুয়াশাচ্ছন্ন শীতের সকাল ভাবলেই মনে পড়ে চারিদিকে কুয়াশাতে ঘেরা মনে হয় যেন সাদা সাদা ধোয়াতে ভরে গেছে। গাছের পাতার উপর এক বিন্দু শিশির কণা এক অসাধারণ সুন্দর পরিবেশ যেন এক কল্পনার স্বর্গরাজ্য।
উত্তরাঞ্চলে কয়েকদিন ধরেই শীতের হাওয়া বইতে শুরু করেছে অর্থাৎ সকালবেলা ঘন কুয়াশায় চারিদিকে ঘিরে যাচ্ছে যেন শীতের আগাম বার্তা জানান দিচ্ছে আবার গভীর রাতে চারিদিকে কুয়াশার উপস্থিতি প্রমাণ করে যে শীত আসছে খুব জলদি আজকের আর্টিকেলে সেখানে আলোচনা করব এবং তাই আজকের আর্টিকেলটি হতে চলেছে বেশ রোমান্টিক।
সূচীপত্র ঃ কুয়াশাচ্ছন্ন শীতের সকাল
- কুয়াশাচ্ছন্ন শীতের সকাল
- কুয়াশাচ্ছন্ন শীতের প্রভাতের দৃষ্টি ও অনুভূতি
- প্রকৃতির শীতের রূপবৈচিত্র্য
- গ্রামীণ জীবনের শীতের সকাল
- নগর জীবনের শীতের সকাল
- শীতে শিশির কুয়াশা ও পরিবেশ বিজ্ঞান
- শীতে কৃষি প্রকৃতি ও শ্রমজীবীর সম্পর্ক
- সাহিত্যে শীতের প্রতিফলন
- শীত ও মানব জীবনের দার্শনিক দিক
- শীতকালীন সামাজিক প্রেক্ষাপট
- শীতের ব্যক্তিগত অনুভূতি ও শৈশবের স্মৃতি
- শীতের প্রশ্ন ও উত্তর
- শেষ কথা
কুয়াশাচ্ছন্ন শীতের সকাল
হেমন্তের মাঝামাঝি সময় থেকেই শীতের একটা আমেজ শুরু হয়ে যায় বিশেষ করে
বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে শীতের প্রভাবটা প্রথম থেকে শুরু হয় এবং শীতের তীব্রতা ও
এই উত্তর অঞ্চলে সবথেকে তীব্র আর তাই শীতের আগমনী বার্তা হিসেবে প্রথমে
উত্তরাঞ্চলেই দেখা যায় সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড় এই পঞ্চগড়ে সে তীব্রতা বা
আগমন সর্বপ্রথম পরিলক্ষিত হয়।
শীতের সকালে ঘন সাদা সাদা কুয়াশা ঘাস লতাপাতা এবং গাছের উপর শিশির বিন্দুর সহস্র
কণা এক অপরূপ রূপের সৃষ্টি করে যা সৃষ্টি কর্তার এক অশেষ সৌন্দর্যের মধ্যে একটি।
গ্রামে মানুষের শীতের কাপড় চাদর গায়ে উঠে আগুন পোহানো অর্থাৎ আগুন জেলে
চারিদিকে নিজের শরীরকে একটু গরম করা এটা অত্যন্ত লক্ষণীয়।
হেমন্তের মাঝে মাঝে শীতের আবির্ভাব হয় কৃষকের মনে প্রাণে সে সময় শীত হলেও বেজে
উঠে আনন্দের ছটা কারণ হেমন্তের মাঝামাঝি বা শেষের দিকে নতুন ফসল কাটার সময়
হয়ে ওঠে। তাই কৃষক এর মনে স্বপ্ন বাধে নতুন ফসল ঘরে তোলার আর এই আনন্দে
শীত এনে দেয় এক অন্যরকম ভালো লাগা।
সেটা শুরুতেই নতুন ফসল ঘরে তুলে কৃষক আর সে আনন্দে ঘরে ঘরে শুরু হয় নতুন ধান ঘরে
তোলার আনন্দ এবং নতুন ধান দিয়ে চাল তৈরি করে চালের আটা দিয়ে
বিভিন্ন সুস্বাদু গ্রাম বাংলার পিঠা ও পায়েস খাওয়ার ধুম পড়ে যায় মনে হয়
যেন এক একটি গ্রাম হয়ে ওঠে আনন্দ উৎসবের এক নিদর্শন।
কুয়াশাচ্ছন্ন শীতের সকাল এই সময় গ্রাম এবং শহরের পরিবেশটা দুই রকম
যেমন গ্রামের পরিবেশ সকলের ছোট ছোট বাচ্চা ছেলে মেয়েরা পায়ে হেঁটে গরম কাপড়
পড়ে স্কুলে যায় অপরদিকে শহর ছেলেমেয়েরা গরম কাপড় পড়ে স্কুলে যায় কিন্তু
তাকে ভিন্নতা এখানে বিভিন্ন যানবাহন ব্যবহার করা হয় অপরদিকে গ্রামে যেমন কৃষক
থেকে শুরু করে বিভিন্ন কর্মজীবী মানুষ চলে যায় মাঠ কাজে করতে অপরদিকে শহরে দেখা
যায় বিভিন্ন দিনমজুর বা অফিস দামি লোকজন অফিসে চলতেছে শীতের কুয়াশার মাঝে দিয়ে
বা শীতকে উপেক্ষা করে।
কুয়াশাচ্ছন্ন শীতের প্রভাতের দৃষ্টি ও অনুভূতি
শীতের কুয়াশাচ্ছন্ন শীতের প্রভাতের দৃষ্টি ও অনুভূতি এক অসাধারণ প্রকৃতির
ধারণ কৃত দৃশ্য পূর্ব আকাশে সূর্যের আবির্ভাব চারিদিকে লাল আভা দেখে বোঝা
যাচ্ছে পূর্ব আকাশে সূর্যের আবির্ভাব হতে চলেছে চারিদিকে ঘন কুয়াশা মনে হচ্ছে
সাদা সাদা ধোঁয়া চারদিক ছেয়ে গেছে । শুধু কাছের গাছগুলো এবং কাছের মানুষগুলোকে
দেখা যাচ্ছে আর কিছুই দেখা যাচ্ছে না এক অপরূপ দৃশ্য শীতের হিম বাতাস।
ভেবে দেখুন তো কিছু মানুষ আগুনে শেখ দিচ্ছে। শীতকে কিছুটা দূরীভূত করার জন্য এবং
এ সময় চায়ের দোকানগুলোতে ভিড় জমে শীতের গরম কাপড় পড়ে গরম গরম চা খেয়ে
আর জমজমাট আড্ডা বসে। ঘাসের পাতার উপর শিশির বিন্দুর কণা এ সময়
খেজুরের রস খেয়ে মানুষ আনন্দ উদযাপন করে আসলে খেজুরের রস আল্লাহর এক অশেষ
নেয়ামত শক্ত কাঠফাটা গাছের বুক চুরে বের হয়ে আসে সুস্বাদু মিষ্টি খেজুরের রস
আল্লাহর নিয়ামত ছাড়া আর কি বলা যায়।
দল বেঁধে কৃষক দল মাঠে যাচ্ছে কাজ করতে গ্রামীণ পরিবেশের সে আগের দৃশ্য এখন দেখা
হয়ে গেল এখনকার পরিবেশ ও কম সৌন্দর্য নয় আগে যেমন দেখা যেত কৃষক হাতে কোদাল গরু
আর মহিষ এবং কৃষি কাজের সরঞ্জাম নিয়ে মাঠে যাচ্ছে কাজ করতে আজ কৃষি কাজেও নেমেছে
আধুনিকতার ছোঁয়া আগে যেখানে গরু মহিষ এবং মানুষের হাত দ্বারা কাজ করা হতো সেখানে
লেগেছে বিভিন্ন অত্যাধুনিক প্রযুক্তির মেশিন।
প্রকৃতির শীতের রূপবৈচিত্র্য
প্রকৃতির শীতের রূপ বৈচিত্র এক অসাধারণ পরিবর্তন আসে এই সময়ে প্রকৃতিতে কারণ
বাংলাদেশ বলা হয় ষড়ঋতুর দেশ আর ঋতু বৈচিত্র্যের এই খেলায় শীত নিয়ে
আসে এক অন্যরকম পরিবেশ শীতের হিমেল হাওয়া, ঘাসের ওপর শিশির বিন্দু
কণা, ঘন কুয়াশা , শীতের আমেজের খেজুরের রস , এরকম বিভিন্ন পরিবর্তন
নিয়ে আসে এবং প্রকৃতির রূপ বৈচিত্রে দেখা যায় এক অন্যরকম দৃষ্টিকোণ চলুন আজকের
আর্টিকেলে আলোচনা করব এসব বৈচিত্রের।
শীতের হিমেল হাওয়াঃ
এ সময় বাতাসে এক হিমেল হাওয়া বয়ে যায় চারদিকে পরিবেশ কেমন থমথমে এবং শীতের
দক্ষতার সাথে সাথে বাতাসের গতি এবং ঠান্ডা অনুভব পরিবেশকে এনে দেয় এক
অন্যরূপ বৈচিত্রে এই শীতের দক্ষতা জন্য গাছের পাতা ঝরে যায় এক হিমেল হওয়ার
রোমাঞ্চকর অবস্থার তৈরি হয়।
ঘাসের ওপর শিশির বিন্দু কণাঃ
ঘাসের ওপর শিশির বিন্দু করা সারারাত কুয়াশাচ্ছন্ন থাকার পরে সকালে শহর কিংবা
গ্রামে ঘাসের ওপর বিন্দু বিন্দু শিশির কণা জমে থাকতে দেখা যায় যা পরিবেশকে
বা প্রকৃতির রূপ বৈচিত্র্য এনে দেয় এক অন্যরকম ভালোলাগা যা এ সময়
একমাত্র দেখা যায় । এবং এ রূপ বৈচিত্রের প্রকৃতির এক রোমাঞ্চকর দৃশ্যের
সৃষ্টি হয়।
ঘন কুয়াশাঃ
শীতের এ সময় রাত্রে ঘন কুয়াশা পড়তে শুরু করে রাত যত বাড়তে থাকে কুয়াশার
পরিমাণ তত ঘন হতে থাকে এই কুয়াশার যে ঘনত্ব তা দিনের আলোতে দেখা যায় অর্থাৎ
সকাল হলেও কুয়াশা চারিদিকে ঘিরে থাকে যেন প্রকৃতি তার পরিবেশের
আশেপাশ কে ঘিরে রেখেছে সাদা চাদরের এক ঘন
কুয়াশার মোড়কে। কুয়াশা অনেক সময় দূরভিত হতে অর্থাৎ কুয়াশা
ছিন্ন হতে অনেক সময় দুপুর অবধি গড়িয়ে যায়।
শীতের আমেজের খেজুরের রসঃ
প্রকৃতির এক অশেষ এবং অন্যতম বৈচিত্রের মধ্যে একটি খেজুরের রস যেখানে খেজুর
গাছ শীতকাল ছাড়া বছরের অন্য সময় কাঠফাটা অর্থাৎ কাঠের মত শক্ত হয়ে থাকে
সেখানে শীতকাল আসলেই সেই খেজুর গাছের অমৃত এক সাদ মিষ্টি খেজুর রস বেরিয়ে
আসে আল্লাহর নিয়ামত সত্যিই বোঝা বড় দায় এ খেজুরের রস বছরের এই সময়তে পাওয়া
যায় অর্থাৎ শীতের সময় এবং শীতের রূপ বৈচিত্র এর মাঝে মানুষের
খেজুরের রস খাওয়ার এবং খেজুরের রস দিয়ে বিভিন্ন রকম পিঠা পায়েস খাওয়ার
এক আয়োজন এর ধুম পড়ে যায়।
নবান্নের উৎসবঃ
হেমন্তর পর আসে শীত এবং এ সময় কৃষকের ঘরে ঘরে নতুন ফসল ঘরে তোলার এক
আনন্দ বয়ে বেড়ায় কৃষকরা ধান কাটা শুরু করে এবং সংগ্রহীত ধান অর্থাৎ নতুন
ফসলের তৈরি পিঠা পায়েস ফিন্নি খাওয়ার যেন এক আনন্দ উৎসব চারিদিকে দেখা যায়
উল্লেখযোগ্য পিঠার মধ্যে চালের আটার ভাপা পিঠ, নতুন ধানের পায়েস, দুধ
দিয়ে ভেজানো বিভিন্ন রকম পিঠা যেন পিঠা খাওয়া এবং স্বাদ ও গন্ধে
অতুলনীয় এক রূপের সৃষ্টি হয়।
গ্রামীণ জীবনের শীতের সকাল
গ্রামীণ জীবনের শীতের সকাল শুরু হয় শিশির ভেজা প্রকৃতি , ঘন কুয়াশার
চাদর, মাঠে-ঘাটে কাজ করতে যাওয়া আর খেজুরের রস সংগ্রহ সব মিলিয়ে শীতের
সকাল এ সময়ে গ্রামের মানুষজন উষ্ণ ও আস্থার পথিক হিসেবে একতা ও আনন্দ খুঁজে
পাই। সম্মলিতভাবে বা দলবদ্ধভাবে খেজুরের রস সংগ্রহ করা পরবর্তীতে পিঠা
উৎসবের আনন্দ।
অধিকাংশ কৃষক একত্র হয়ে দলবদ্ধভাবে ধান কাটা সে ধান ঘরে তোলা কুয়াশায় চাদর
মুড়ি দিয়ে আগুন পোহানো সবকিছু যেন গ্রামীন জীবনকে শীত একটি অন্যরকম চিত্র তৈরি
করে দেয়।
ছোট ছোট চায়ের দোকানগুলোতে শুরু হয় চায়ের আড্ডা এবং নতুন ফসল ঘরে ওঠার আনন্দে
গ্রামের মোড়ে মোড়ে শুরু হয় অস্থায়ী কিছু দোকান। যেখানে কিছু সিজিনালি খাবার
পাওয়া যায় যেখানে সবাই ভিড় করে সেসব খাবারের স্বাদ নিতে।অস্থায়ী দোকানে পিঠা,
জিলাপি এসব খাবার এর গন্ধ। ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরা মাঠে-ঘাটে ধান সহ বিভিন্ন
ফসল কুড়িয়ে সেসব অস্থায়ী দোকানে খাবার খাবার জন্য আসে।
নগর জীবনের শীতের সকাল
নগর জীবনের শীতের সকাল আর গ্রামের জীবনের শীতের সকালের মধ্যে বেশ কিছু
পার্থক্য পরিলক্ষিত হয় তবে ঘন কুয়াশাচ্ছন্ন প্রতিচ্ছবি টা যেন সব জায়গাতেই।
তবে গ্রামে সহজ সরল জীবন ও প্রকৃতির বাস্তবিক প্রতিচ্ছবি টা পাওয়া যায়। যেখানে
শহরের জীবনে শীতের সকাল দেখা যায় যানবাহনের ভিড় রাস্তাঘাট এর ব্যস্ততা আধুনিক
জীবনযাত্রা নানা অনুষঙ্গ মানুষের ব্যস্ততা সবই যেন যান্ত্রিক জীবনের
প্রতিচ্ছব।শহরের মানুষগুলো মাঝে অনেকেই গ্রামের সেই সুন্দর স্নিগ্ধ প্রাকৃতিক
চিত্রটা খুঁজে বেড়াই ।
এই সময়ের গ্রামের পিঠা পায়েস খাবার আনন্দটা তাদের মনের মাঝে দোলা দেয়। কিন্তু
জীবনের কর্মব্যস্ততায় কিছুই করার থাকেনা শুধু আফসোস আর স্মৃতিচারণ ছাড়া । তবে
নগর জীবনে অনেকেই রাস্তাঘাটে রেল স্টেশনে বাস স্টেশনে বিভিন্ন জায়গায় খোলা
বসবাস করে তাদের জীবনে চিত্র বেশ কষ্টের। তাদের দেখে কষ্টই লাগে অনেক ধনী
সম্প্রদায়ের লোকজন আসে বিভিন্ন শীতবস্ত খাবার বা অন্য সুযোগ সুবিধা নিয়ে
এতে কিছুটা কষ্ট লাখভ হলেও তাদের কষ্ট যেন সুস্থ ছাড়া স্রষ্টা কেউ দূর করতে পারে
না কেউ।
শীতে শিশির কুয়াশা ও পরিবেশ বিজ্ঞান
শিশির হলো জলীয় বাষ্প থেকে তৈরি হওয়া জলকণা যা রাতের বেলায় শীতল ভূপৃষ্ঠের ওপর
জমা হয়। এর বৈজ্ঞানিক বিভিন্ন কারণ রয়েছে চেষ্টা করব সেইসব বিষয়গুলো কিছুটা হল
তুলে ধরার চেষ্টা করব। যখন ভূপৃষ্ঠ ঠান্ডা হয় তখন এর কাছাকাছি থাকা বাতাস শীতল
হয় এবং জলীয় বাষ্প ঘনীভূত হয় এবং এটি ঘাস গাছের পাতা এবং অন্যান্য শীতল
পৃষ্ঠে জমা হয়। শীতকালে রাতের তাপমাত্রা অনেকটা কমে যায় এর কারণ হচ্ছে দিনের
সূর্যের আলোর তাপমাত্রা অনেকটা কমে যায় এবং দিন ছোট রাত বড় হয়। অর্থাৎ রাতের
সময়টা দীর্ঘ হয় যা শিশির ও কুয়াশার সৃষ্টির একটি অন্যতম প্রধান কারণ।
বাতাসে থাকা জলীয় বাষ্পই শিশির ও কুয়াশার মূল উপাদান এবং শীতকালে বাতাসের
আদ্রতা অনেক কম থাকে আর এ কারণে ও শরীরের বিভিন্ন অংশ অর্থাৎ মানবদেহের বিভিন্ন
অংশ ফেটে যায়। শীতের রুক্ষতা রোগ থেকে গাছপালাও রেহাই পায় না। তাই গাছের পাতা
পড়া এবং রুক্ষ বাতাস পরিবেশ কেউ কিছুটা বিচলিত ক।
শীতকালের ঠান্ডা বাতাস কম আর্দ্রতা আর মেঘ তৈরি হওয়ার অনুকূল পরিবেশ
সৃষ্টি হয় না। আর এই পরিবেশ সৃষ্টি হওয়ার না কারণ থেকে বৃষ্টি ও অনেক কম হয়।
তবে একথা সত্য যে বৃষ্টি যে একেবারেই হয় না ত।কিন্তু অন্যান্য ঋতু বা মাসের
তুলনায় যে বৈরি আবহাওয়া থাকে অর্থাৎ বৃষ্টির যে সম্ভাবনা থাকে শীতকালে তার
সম্ভাবনা অনেকটাই কম।
শীতে কৃষি প্রকৃতি ও শ্রমজীবীর সম্পর্ক
শীতে কৃষি প্রকৃতির জন্য অনুকূল এবং প্রতিকূল দুটি বিদ্যমান তারপরও শীতে অনেক
ধরনের সবজি এর চাষ করে থেকে গ্রামের কৃষকরা । তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য সবজি হল আলু,
সিম , ফুলকপি, বাঁধাকপি, পেঁয়াজ , রসুন, টমেটো এরকম অসংখ্য রকমের সবজি
কৃষকরা এই সময় চাষ করে থাকে এবং ভুট্টা , গম এ ধরনের ফসল এই সময় বেশ ভালো
হয়। ধানও চাষ করে অনেক কৃষক।
তবে উল্লেখক্রীত সবজিগুলো চাষ করার জন্য এই সময় কৃষকরা ব্যস্ত
সময় পার করে। এই সময় সবজি বা ফসল ভালো হলেও এর রয়েছে বেশ কিছু
অনুকূল এবং প্রতিকূল অবস্থা । তবে সঠিক ব্যবস্থাপনা এবং যত্ন নিলে ভালো কিছু করা
সম্ভব আজকের আর্টিকেলে চেষ্টা করব অনুকূল এবং প্রতিকূল প্রভাব গুলো কি কি হতে
পারে।
অনুকূলঃ
শীতের শুষ্ক ও শীতল আবহাওয়া অনেক শীতকালের সবজি যেমন আলু , পেঁয়াজ , টমেটো
ইত্যাদি চাষের জন্য খুবই উপকারী এটি আমি আগেই বলেছি । এই সময় এই সব সবজি
চাষ করবার জন্য উত্তম সময়।
প্রতিকূলঃ
তীব্র শিত এবং ঘন কুয়াশা রোদ কমিয়ে দেয় যা ফসলের বৃদ্ধিতে বাধা সৃষ্টি
করে এবং ছত্রাক আক্রমণ অনুকূল প্রবেশ পরিবেশ তৈরি করে। অনেক সময়তে রোদ
খারাপ কিছু হলেও শীতের মিষ্টি রোদ এবং গরম কালের কড়া রোদ বেশ উপকারী বিভিন্ন
ফসলের জন্য আসলে সব কিছুরই দরকার আছে যা প্রকৃতিতে আল্লাহতালা দিয়ে রাখছে।
শীতকালীন ব্যস্ত কৃষক জীবনঃ
শীতের শুরুতে কৃষকরা ব্যস্ত থাকে বিভিন্ন ধরনের মৌসুমী ফসলের বীজ সংগ্রহ
জমি তৈরি এবং চারা গজানোর পর থেকে তাদের মূল ব্যস্ততা শুরু হয় । অর্থাৎ চাষাবাদ
করার জন্য ফসলের সার পানি এবং বিভিন্ন রোগ বালাই নিয়ন্ত্রণ করার জন্য বা যত্ন
নেওয়ার জন্য এই সময় কৃষককে ব্যস্ত থাকতে হয় অন্যান্য সময়ের থেকে একটু বেশি ।
কারণ শীতের তীব্রতা বা ঘন কুয়াশার জন্য ফসলের ক্ষতির আশঙ্কা সব সময় তাড়া করে
বেড়ায় কৃষক সমাজকে। তাই কৃষক এ সময় সব সময় সজাগ থাকে এবং যত্ন করে ফসলের
যাতে ফলন ভালো হয়।
শ্রমজীবী মানুষের জীবন ও শীতের প্রভাব ঃ
শীতের কারণে ফসলের ক্ষতি হলে কৃষকের আয় কমে যায় যা তাদের এবং তাদের পরিবারের
ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে । সেজন্য অর্থাৎ শীতের সময় ফলন ভালো হওয়ার জন্য
কৃষককে সবসময় সজাগ থাকতে হবে যাতে তীব্র শীত এবং কুয়াশা জনজীবনকে বিপর্যস্ত করে
তুললেও ফসলের সেরকম যেন ক্ষতি না হয়।
সাহিত্যে শীতের প্রতিফলন
বাংলার সাহিত্যে প্রায় প্রতিটা কবি নিজ নিজ ভঙ্গিতে শীতের বিষন্নতা ,
প্রকৃতির রুক্ষতা , একাকীত্বকে বিভন্নভাবে উপস্থাপন করেছেন এবং একাধিক কবি
সাহিত্যের কাছে শীত রোমাঞ্চকর হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। শীতের আরাম ,
শীতের কষ্ট , শীতের পিঠা-পুলি উৎসব শীতের বিভিন্ন রকম ঐতিহ্যের খাবার শীতের
উষ্ণতা এবং শীতের আপাত মৃত্যুর পর বসন্তের আগমন নতুন জীবন ও জীবনে পূন্য জীবনের
প্রতিটি হিসেবে কাজ করে ।
বিভিন্ন কবি শীতকে ব্যক্তিগত অনুভূতির সাথে মিশিয়ে প্রেম কষ্ট ও প্রকৃতির
বৃত্ত থেকে ফুটিয়ে তুলেছেন অনেকে আবার শীতের দীর্ঘ রাত এবং সূর্যদের অপেক্ষার
কথা উল্লেখ করে শীতের প্রতীক্ষার একটি ছবি দেখেছেন এঁকেছেন।
শীত ও মানব জীবনের দার্শনিক দিক
শীত ও মানব জীবনের দার্শনিক দিকগুলো সবার জন্য এক হয়ে থাকে না অর্থাৎ ধনীদের
জন্য শীত যেমন আহাদায়ক বা ফ্যাশনেবল হয়ে থাকে কিন্তু ঘরহীন মানুষ বা
সমাজের দরিদ্র শ্রেণীর মানুষরা শীতে অত্যন্ত দুঃখের এবং কষ্টের মধ্যে দিন পার
করে।
কঠিন শীত ঘরহীন মানুষের দুঃখের দুর্দশার শেষ থাকেনা অর্থাৎ শীতে তাদের
থাকে না ঘর আর না থাকে শীতবস্তু যার ফলে সে তো তাদেরকে পড়তে হয় দারুন দুর্দশায়
অতী শীতের কারণে মানুষের হৃৎপিণ্ড মস্তিষ্ক এর উপর প্রভাব পড়ে । এসব
শারীরিক অঙ্গ দুর্বল হয়ে পড়ে।
শীত শুধু একটি ঋতু নয় এর কঠিন বাস্তবতা মানুষকে শেখায় কিভাবে প্রতিকূল আবহাওয়া
সাথে নিজেকে রক্ষা করতে হয় এবং প্রতিকূল অবস্থার সাথে লড়াই করে কিভাবে
নিজেকে রক্ষা করতে হয়।
শীতকালীন সামাজিক প্রেক্ষাপট
শীতকালীন সামাজিক প্রেক্ষাপট আনন্দ উৎসব এবং দুঃখের বা কষ্টের হয়ে থাকে যদি একটু
ব্যাখ্যা করে বলা যায় তাহলে সমাজের উঁচু শ্রেণী মানুষের জন্য শীতকালীন বিভিন্ন
পিঠা পুলি খাওয়ার মোক্ষম সময় বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে যাওয়ার জন্য শীতকে সবসময়
বেছে নেয় বিভিন্ন মানুষজন কারণ শীতের সময় গরমের মতো শরীর ঘেমে যায় না বা গরমে
শরীর ক্লান্ত হয়ে যায় না যার কারণে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরবার জন্য শীতকে বেছে
নেই সব মানুষ।
শীতকালীন সময়ে সমাজের উচ্চ শ্রেণীর মানুষরা একে ওপরে আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে
বেড়াতে যাই তারা একসাথে পিঠাপুলি আয়োজন করে বা কোন জায়গায় ঘুরার জন্য একে
অপরের সঙ্ঘবদ্ধ সামাজিক প্রেক্ষাপট তৈরি হয়।
অপরদিকে সমাজের নিচু শ্রেণীর মানুষ অত্যন্ত দুঃখ-দর দশা এর মাধ্যমে জীবন পরিচালনা
করে তাদের না থাকে ঘর না থাকে শীতবস্তু আর তার জন্যই সমাজের উঁচু শ্রেণী মানুষের
উচিত নিম্ন শ্রেণীর মানুষগুলোকে মাথা গোজার ঠাই বা শীত বস্ত্র বিনামূল্যে বিতরণের
ব্যবস্থা করা।
শীতের ব্যক্তিগত অনুভূতি ও শৈশবের স্মৃতি
শীতের ব্যক্তিগত অনুভূতি ও শৈশবের স্মৃতি শীতের অনুভূতি ঘন কুয়াশা খেজুরের
রস বা পিঠাপুলির এবং শৈশবের স্মৃতি ফিরে আনা এসবকে বুঝায় সবাই মিলে একসাথে হয়ে
অর্থাৎ ভাই বোন সবাই একসাথে হয়ে নানি বা মায়ের হাতের পিঠা ।
শৈশবে বন্ধু বান্ধবের সাথে আড্ডা একসাথে গরম গরম চা খাওয়া বন্ধু-বান্ধবের সাথে
বিভিন্ন ধরনের খেলায় অংশগ্রহণ করা যেমন আমাদের সময় বিভিন্ন তাফসীর মাহফিল বা
বিভিন্ন মাহফিল অনুষ্ঠিত হয় শীতের সময় সবাই একসাথে সেসব মাহফিল আনন্দ নেওয়া
মনে করিয়ে দেয়।
শীতের বন্ধু বান্ধব বা আত্মীয়-স্বজন সবাই একসাথে শীতের নির্ধারণ করার জন্য
লেপের তলে কম্বলের তলে এক হয়ে আড্ডা দেওয়া। অতিরিক্ত শীত হলে বন্ধুবান্ধব
আত্মীয়-স্বজন সবাই মিলে একটি জায়গায় আগুন ধরিয়ে সে আগুন থেকে গরম তাপ নেওয়া
সবকিছু যেন শৈশবের স্মৃতি হয়ে নিজের অনুভূতি হয়ে মনকে নাড়া দেয় সব
সময়।
শীতের প্রশ্ন ও উত্তর
প্রশ্নঃ বাংলাদেশের শীতকাল কখন শুরু হয় এবং কখন শেষ হয়?
উত্তরঃ বাংলাদেশ শীতকাল সাধারণত শুরু হয় মধ্য নভেম্বর থেকে সাধারণত
ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলতে থাকে অনেক সময় আর একটু বেশি সময় অবস্থান করে
শীত কিন্তু সেটার পরিমাণ সব সময় হয় না।
প্রশ্নঃ শীতকালের প্রধান বৈশিষ্ট্য কি কি?
উত্তরঃ শীতকাল প্রধানত বৈশিষ্ট্য গুলো হলো
- এটি বছরের সবচেয়ে ঠান্ডা ঋতু
- দিন ছোট এবং রাত্রি বড় হয়
- তাপমাত্রা অনেকটা কমে যায়
- শীতকালের সাধারণত অনেক জায়গায় তুষারপাত দেখা যায়
- শীতকালে বাতাসে হিমেল হাওয়া বাতাস বা ঠান্ডা বাতাস বইতে থাকে
- শীতকালে মানুষের শরীর রুক্ষ হয়ে যায় তার কারণ হিসেবে এ সময় বাতাসের আদ্রতা অনেক রুক্ষতা বিরাজমান থাকে।
- আকাশে ঘন কুয়াশা দেখা যায়
- সকাল বেলা বা রাত্রিবেলা শিশির বিন্দু দেখা দেয় যা এক রোমান্টিক পরিবেশ সৃষ্টি করে।
প্রশ্নঃ শীতকাল কি খারাপ ঋত?
ু উত্তরঃ হ্যাঁ কিছু কিছু ক্ষেত্রে শীতকাল খারাপ ঋতু কারণ এ সময়
শরীরে ঠান্ডার কারণে বিভিন্ন ধরনের রোগে সৃষ্টি হয় যা অত্যন্ত
পীড়াদায়ক।
প্রশ্নঃ শীতকালে কৃষিকাজের জন্য কেমন ঋতু?
উত্তরঃ শীতকালে বিভিন্ন ধরনের সবজি বা ফল পাওয়া যায় একদিক দিয়ে বলা যায়
শীতকালে কৃষিকাজ এর জন্য অত্যন্ত আরামদায়ক বা সঠিক ঋতু কিন্তু ঘন কুয়াশা বা
প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ফসলের অনেক সময় কঠিন রোগ দেখা যায় যা
স্বাভাবিক উৎপাদনকে বিপদস্থ করে।
প্রশ্নঃ শীতকাল বৃদ্ধ মানুষের জন্য কেমন ঋতু?
উত্তরঃ শীতকাল বৃদ্ধ মানুষের জন্য একদিকে আরামদায়ক অন্যদিকে বেশ কষ্টদায়ক
অর্থাৎ আরামদায় ক যদি শীত হয় স্বাভাবিক কিন্তু যদি অস্বাভাবিক রকমের ঠান্ডা
পড়ে যায় তাহলে বৃদ্ধ মানুষের জন্য অনেক কষ্টকর হয়ে পড়ে এবং মৃত্যুর কারণও হতে
পারে।
শেষ কথা
শীতের শেষ কথা বলতে গেলে আমরা বুঝি শীতের শেষ অর্থাৎ ফেব্রুয়ারির পরে শুরু
হয় মার্চ এবং ঋতু বৈচিত্র ক্রমে আসে পরিবর্তন এ সময় বাংলার ঋতুতে শুরু হয়
বসন্তের আগমন শীতের রুখ্য তাই যেসব গাছের পাতা ঝরে গেছিল বসন্তের আগমনে
সেসব কাজগুলোতে নতুন পাতা গজাতে থাকে মনে হয় প্রকৃতি যেন নতুন
রূপে সাজাতে চলেছে।
ধীরে ধীরে শীতের ঠান্ডা আবহাওয়ার পরিবর্তন হয়ে আস্তে আস্তে গরম
অনুভূতি হতে থাকে অর্থাৎ আবহাওয়ার পরিবর্তন দেখা যায়। বাতাসে
শীতের যে রুক্ষতা রয়েছে তা পরিবর্তন হয়ে গরম ঝালাস বাতাস এ পরিবর্তন
হয়।



টাইম বিডি ২৪ নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url