লাভ বার্ড পাখি পালন পদ্ধতি
লাভ বার্ড পাখি পালন পদ্ধতি, বর্তমান সময়ে পাখি পালন একটি ট্রেড হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় প্রতিটি নতুন প্রজন্ম পাখির প্রতি এক ধরনের ভালোবাসা প্রকাশ করছে। এই ভালোবাসা এবং আগ্রহকে সম্মান জানিয়ে আজকের আর্টিকেল তাই জনপ্রিয় পাখি লাভ বার্ড এর পালন পদ্ধতি নিয়ে।
লাভ বার্ড অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি পাখি, এর কারণ হিসেবে লাভ বার্ডের শান্ত স্বভাব মানুষের প্রতি লাভ বার্ডের ভালবাসা, হরেক রকম রংয়ের প্রভাব, লাভ বার্ডকে গড়ে চলেছে বর্তমান প্রজন্ম এর কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় ও ভালোবাসার একটি পাখি। চলুন আর্টিকেল শুরু করা যাক।
সূচিপত্রঃ লাভ বার্ড পাখি পালন পদ্ধতি
- লাভ বার্ড পরিচিতি ও জনপ্রিয়তার কারণ
- লাভ বার্ড এর বিভিন্ন প্রজাতি ও সঠিক পাখি নির্বাচন
- লাভ বার্ডের আদর্শ আবাসস্থল
- লাভ বার্ডের খাদ্য তালিকা
- লাভ বার্ডের প্রজনন পদ্ধতি ও ডিম বাচ্চার সফল পরিচর্যা
- লাভ বার্ডের রোগ বালায় ও চিকিৎসা
- লাভ বার্ড পালনে ভুল ও সর্তকতা
- লাভ বার্ড খামার তৈরির কৌশল
- প্রশ্ন ও উত্তর
- শেষ কথা
লাভ বার্ড পরিচিতি ও জনপ্রিয়তার কারণ
লাভ বার্ড বর্তমানে বেস্ট জনপ্রিয় ও ভালোবাসার একটি পাখি।এ জনপ্রিয়তার মূল কারণ
হচ্ছে পাখিগুলো অনেক মিষ্টি কালারের এবং মানুষ প্রেমী ও বেশ চটপটে আকৃতির। লাভ
বার্ড পাখি সাধারণত আফ্রিকার পাখি অর্থাৎ লাভ বার্ডের আবাসস্থল
আফ্রিকায়। পৃথিবীতে মোট নয় প্রজাতির লাভ বার্ড পাওয়া যায় এর মাঝে ৮ প্রজাতির
লাভ বার্ড এর আবাসস্থল আফ্রিকায় আর মাত্র একটি প্রজাতির আবাসস্থল মাদাগাস্কার ।
একটি লাভ বার্ড পাখি সাধারণত ১০থেকে ১৫ বছর বাঁচতে পারে।
লাভ বার্ড বেস্ট চটপটে প্রজাতির পাখি সারাদিন বিভিন্ন কাজকর্ম করতে ব্যস্ত থাকতে
পছন্দ করে। তাদের মধ্যে একটি আচরণ অনেকে বিরক্ত হয় কিন্তু যারা লাভ বার্ড পছন্দ
করে তাদের কাছে একটি সম্বোধন বা খুব কাছের একটি ভাষা অর্থাৎ লাভ বার্ড পাখি
উচ্চস্বরে চেঁচামেচি করে। এছাড়া লাভ বার্ড পাখি অনেক ভীতু একটি
পাখি। সামান্য শব্দ বা ভয় পেলে চট জলদি হাঁড়ির ভেতরে ঢুকে
যায়। হাড়ি কে তারা তাদের নির্ভয়ের জায়গা বা সুরক্ষিত জায়গা মনে
করে।
এদের খাচায় ছোট ছোট গাছের ডাল বা খেলনা দিলে এরা বেশ উপভোগ্য করে এবং
সারাদিন খেলাধুলার মধ্যে ব্যস্ত থাকে কিছু কিছু গাছের ডাল অর্থাৎ যে গাছের ডালটি
দেওয়া হয় সেটিতে যদি গাছের ছাল থাকে তাহলে সে ছালটি ছড়াতে বা চিবুতে খুব পছন্দ
করে এটা এক ধরনের খেলা তারা মনে করে।
লাভ বার্ড পাখি জোড়ায় জোড়ায় থাকতে পছন্দ করে এবং তাদের জোড়া যখন মিলে যায়
তখন তারা তাদের সঙ্গী বা জোড়াকে খুব ভালোবাসে । পাশাপাশি বসে একে অপরের মুখ থেকে
খাবার খাওয়া, পালক ঠিক করে দেওয়া এবং খাবার -গোসল সব একসাথে করতে দেখা যায় এটা
আসলে তাদের ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ। আজকের আর্টিকেলে লাভ বার্ড পাখি পালন পদ্ধতি এর
বিষয়ে সম্পূর্ণ আলোচনা করব আশা করি আপনাদের উপকারে আসবে।
লাভ বার্ড এর বিভিন্ন প্রজাতি ও সঠিক পাখি নির্বাচন
লাভ বার্ড একটি বিদেশি পাখি পৃথিবীতে লাভ বার্ডের অসংখ্য উপ প্রজাতি থাকলেও মূলত
লাভ বার্ডের প্রজাতির সংখ্যা নয়টি এর মধ্যে বাংলাদেশের অর্থাৎ আমাদের দেশে
সবগুলো প্রজাতি পাওয়া গেলেও বেশ জনপ্রিয় এবং মানুষের কাছে পছন্দ শীল প্রজাতির
সংখ্যা অল্প কিছু যেমন গ্রীন ফিসার, ইয়েলো ফিসার, লুটিনো ফিসার, চিক মাস্ক
বা ব্ল্যাক মাস্ক লাভ বার্ড, ব্লু ম্যাক্স বিভিন্ন অপালিন এসব প্রজাতি গুলো
আমাদের দেশে অর্থাৎ বাংলাদেশে বেশ জনপ্রিয় প্রজাতি।
এই সবগুলো প্রজাতি দুটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এ বিভক্ত রিং আই লাভবার্ড এবং নন
রিং আই লাভ বার্ড। অর্থাৎ লাভ বার্ড গুলোর চোখে এক ধরনের লাভ বার্ড আছে যার চোখে
চারপাশে গোলাকার একটি বলয় তৈরি আছে সাদা কালারের আবার কিছু প্রজাতি আছে যাদের
সেই বলয় বার নেই।আজকের আর্টিকেলে আলোচনা করব লাভ বার্ডের বেশ জনপ্রিয়
প্রজাতিগুলো নিয়ে কেন এ প্রজাতিগুলো মানুষের কাছে অত্যন্ত প্রিয় এবং মানুষ তার
শখের বসে এসব লাভ বার্ডে পাখিগুলো বা প্রজাতিগুলো কিনে নিয়ে থাকে।
গ্রীন ফিসার লাভ বার্ডঃ
গ্রিন ফিসার লাভ বার্ড একটি Agapornis fischeri প্রজাতির লাভ বার্ড এটি
সাধারণত সবুজ রঙের হয়ে থাকে অর্থাৎ এদের পালক ডানা এবং পুরো বডি সবুজ কালারের
মাথায় লাল বা কমলা কালারের হয়ে থাকে এটিও অত্যন্ত সুন্দর দেখতে যার ফলে
অনেকেই পোষা পাখি হিসেবে এই এই প্রজাতিকে পছন্দ করে এবং আরও একটি দিক
রয়েছে অন্যান্য প্রজাতিগুলো থেকে এই গ্রীন ফিসার প্রজাতির লাভ বার্ডের
দাম মূল্য তুলনামূলকভাবে অন্যান্য প্রজাতির থেকে কম যার ফলে মানুষের এই প্রজাতির
প্রতি ভালো লাগাটা আরেকটি কারণ।
গ্রিন ফিসার লাভ বার্ড পোষা পাখি হিসেবে সাধারণত ২৪* ২৪*২৪ সাইজের
খাঁচার প্রয়োজন হয় এই প্রজাতির পাখিগুলো একসাথে সাধারণত পাঁচ থেকে ছয়টি
ডিম দিয়ে থাকে তবে যদি নতুন পাখি হয় অর্থাৎ প্রথমবার ডিম দেয় তাহলে সাধারণত
দুটি বা তিনটি ডিম দিয়ে থাকে পরবর্তী অর্থাৎ সেকেন্ড টাইম বা তার পরবর্তী
সময়ে ডিমের সংখ্যা বেড়ে ধীরে ধীরে ছয় থেকে সাতটি সর্বোচ্চ ডিম পেড়ে থাকে।
ইয়েলো ফিসার লাভ বার্ডঃ
ইয়েলো ফিসার লাভ বার্ড ফুল বডি হলুদ কালারের হয়ে থাকে এক কালারের
অর্থাৎ মাথা থেকে শুরু করে সমস্ত শরীর হলুদ কালারের যা দেখতে অসম্ভব
সুন্দর লাগে যার ফলে মানুষ পোষা পাখি হিসেবে এই ইয়েলো ফিসার লাভ বার্ড কে
খুব পছন্দ করে। ইয়েলো ফিসার লাভ বার্ড সাধারণত অত্যন্ত সামাজিক একটি পাখি এটি মূলত
আফ্রিকার পূর্বাঞ্চলের একটি পাখি এটি একসাথে দলবদ্ধ ভাবে এবং কোলহল অবস্থা থাকে
অর্থাৎ তারা একে অপরকে শুধু ডাকাডাকি করে আর চেঁচামেচি করে দলবদ্ধ ভাবে বসবাস
করে বাংলাদেশ পাখি প্রেমীদের ক্ষেত্রে এটি অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি পাখি দেখতে
ছোট তোতা পাখির মত এই পাখির কালার হলুদ হয় দূর থেকে দেখেও বেশ সুন্দর
লাগে।
লুটিনো ফিসার লাভ বার্ডঃ
লুটিনো ফিশার লাভ বার অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি পাখি এটি সাধারণত উজ্জ্বল হলুদ
রঙের এবং কমলা রঙের মিশ্রণ থাকে অর্থাৎ এদের ফুল বডি উজ্জ্বল হলুদ রংয়ের এবং
মাথাটা কমলা রঙের হয় দেখতে অত্যন্ত সুন্দর এবং আকর্ষণীয় একটি পাখি এ পাখির
আবাসস্থল আফ্রিকার মধ্য অঞ্চলে এই পাখিটিকে দেখতে টিয়া পাখির মত মনে হয়
অর্থাৎ টিয়া পাখি বড় হয় কিন্তু এ পাখির ছোট হোক দেখে মনে হয় যে টিয়া
পাখিরই বাচ্চা বা টিয়া পাখির মতই যারা জানেনা তারা অনেক সময় এটিকে টিয়া পাখি
বলে ভুল করে এরা তাদের সঙ্গীর প্রতি অটুট বন্ধনে আবদ্ধ থাকে এবং অনুগত
থাকে।
চিক মাস্ক বা ব্ল্যাক মাস্ক লাভ বার্ড ঃ
চিক মাস্ক বা ব্ল্যাক মাস্ক লাভ বার্ড এরা অত্যন্ত প্রিয় একটি পাখি এবং
মালিকের বেশ ভক্ত অর্থাৎ খুব সহজে পোষা পাখি হিসেবে না মেনে
নিলেও একটা সময় খুব প্রভুক্ত হয়ে ওঠে। এদের গায়ের কালার সবুজ এবং
মাথায় ব্লাক কালার অর্থাৎ কালো কালারের মার্কসের মত আবরণ থাকে যার ফলে এর নাম
হয়েছে চিক মাস্ক বা ব্ল্যাক মাস্ক লাভ বার্ড এরা অত্যন্ত সংবেদনশীল এরা খুব
সামাজিক ও কৌতুহলী প্রাণী নিজেদের মধ্যে খেলা করতে এরা খুব পছন্দ করে এদের
সামনে খেলনা দিয়ে রাখলে এরা খেলতে ব্যস্ত থাকে, এ জাতির পাখিগুলো
গোসল করতে খুব পছন্দ করে তার খাঁচার সামনে বাত টপ দিয়ে রাখলে এবং সেখানে
কুসুম গরম পানি দিলে তারা প্রায় প্রতিদিনই গোসল করবে।
ব্লু মাস্ক লাভ বার্ডঃ
ব্লু মাস্ক লাভ বার্ড দেখতে অনেক সুন্দর একটি পাখি তোতা পাখির মত দেখতে।
এদের গায়ের কালার নীল মাথায় কালো বা ধূসর রং এর মার্কস থাকে যার ফলে দেখতে
অত্যন্ত সুন্দর । এবং অন্যান্য লাভ বার্ড এর থেকে একটু ছোট হয়ে থাকে এদের প্রধান
বৈশিষ্ট্য হলো এদের চোখের চারপাশে সাদা কালারের একটি বলয় বা বৃত্তাকার আকৃতি
বলয় থাকে। ঠোঁট হালকা গোলাপি আকারে যা পাখিটির সৌন্দর্যের মাত্রা আরেকটু
বাড়িয়ে দেয।পোষা পাখি হিসেবে অনেকেই নীল কালারের হওয়ার কারণে এটিকে পছন্দের
তালিকায় উচ্চ আকারে রাখে এবং বাজারে এই পাখির দামও বেশ চড়া।
অন্যান্য আরো প্রজাতি রয়েছে যা বাংলাদেশের বাজারে পোষা পাখি হিসেবে পাওয়া
যায় তবে উপরোক্ত চারটি প্রজাতির পাখিগুলো মানুষের কাছে বেশ জনপ্রিয় হয়ে সে
দিনে দিনে এবং এই প্রজাতির পাখিগুলোই সাধারণত বাংলাদেশের বা আমাদের দেশের
মানুষদের কাছে দেশ জনপ্রিয় এবং তারা কিনে থাকে পোষা পাখি হিসেবে পালন করার
জন্য।
লাভ বার্ডের আদর্শ আবাসস্থল
লাভ বার্ডের আদি আবাসস্থান হচ্ছে দক্ষিণ-পশ্চিম আফ্রিকা অঞ্চলে । লাভ বার্ড
সাধারণত শুষ্ক মরুভূমির ধারে কোন শুষ্ক গাছের কোটরে বা শুষ্ক পাহাড়ি অঞ্চলের
পাখি। এদের জীবিকা নির্বাহ করার জন্য পানি অপরিহার্য অর্থাৎ পানির আবাসস্থল
যেখানে সেখানে কম হলেও সেখানে তাদের বসবাস সাধারণত এই পাখি দলবদ্ধ ভাবে থাকতে
পছন্দ করে এবং বেশ চেঁচামেচি করে থাকে।
খাঁচায় লাভ বার্ডের রেখে পালন করা যায় তবে খাঁচাটি মাঝারি সাইজের অর্থাৎ
২৪ ইঞ্চি বাই ২৪ ইঞ্চি হলে ভালো হয়। এরা সাধারণত খেলাধুলা করতে পছন্দ করে তাই
খাঁচার ভিতর বিভিন্ন ধরনের খেলনা অর্থাৎ ছোট ছোট বই বা দড়ি এগুলো রাখলে তারা
খেলাধুলা করতে পছন্দ করে এবং পোষা পাখি অর্থাৎ এই পাখি অভ্যস্ত করলে তারা খাঁচার
বাইরেও অর্থাৎ বাসার ভেতরে বিভিন্ন খেলনা বিভিন্ন আসবাবপত্র নিয়ে খেলাধুলা করে
থাকে।
লাভ বার্ডের খাদ্য তালিকা
লাভ বার্ড পাখি সাধারণত বিভিন্ন ধরনের বীজ খেয়ে থাকে উল্লেখযোগ্য বীজগণের নাম
হল কাউন, বজরা, তিসি, সূর্যমুখী , কুসুম ফুলের বীজ, চীনা , সরিষা এর সাথে
সাথে বিভিন্ন ধরনের ফল কচি ঘাসের পাতা এবং শাকসবজি যেমন পালং, কলমি, পুদিনা, সজনে
, নিম , ধনেপাতা তবে উল্লেখযোগ্য কথা হলো যে লাভার যখন লাভ বার্ড যখন খোলা
অবস্থায় থাকে তখন তারা তাদের প্রয়োজনমতো খাবার খেয়ে নিতে পারে।
কিন্তু খাঁচায় পালন করলে তাদেরকে যে খাবার সরবরাহ করবেন সে খাবার খাবে যদি আপনি
খাচায় লাভ বার্ড পাখি পালন করেন তাহলে আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে যে তার শরীরে যে
পুষ্টি গুণ এর করে প্রয়োজন রয়েছে তা আপনার প্রবাহিত খাবার থেকে সরবরাহ
হচ্ছে কিনা তার জন্য আপনাকে কিছু পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে অর্থাৎ আপনার খাবার
তালিকা তৈরি করতে হবে এবং তার শরীরের চাহিদা অনুযায়ী খাবার সরবরাহ করতে হবে।
| খাবারের নাম | প্রকারভেদ | গুরুত্ব |
|---|---|---|
| কাউন (Foxtail Millet) | প্রধান (বীজ) | লাভ বার্ডের বীজের মিশ্রণের প্রধান উপাদান এটি দৈনিক খাবারের বেশিরভাগ অংশে ও জুড়ে থাকে |
| বজরা (Pearl Millet ) | প্রধান (বীজ) | কাউনের মত এটিও দৈনিক খাদ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। |
| চীনা ( Proso Millet ) | প্রধান (বীজ) | দৈনিক বীজের মিশ্রণে থাকা আবশ্যক |
| তিসি ( Flaxseed ) | বীজ ( মাঝে মাঝে ) | উচ্চ ফ্যাটযুক্ত তাই অল্প পরিমানে এবং মাঝে মাঝে দেওয়া উচিত।বিশেষত প্রজনন বা ঠান্ডা আবহাওয়া উপকারী। |
| সূর্যমুখী ( Sunflower Seed ) | বীজ ( মাঝে মাঝে ) | খুব উচ্চ ফ্যাটযুক্ত।তাই অল্প পরিমানে এবং মাঝে মাঝে দেওয়া উচিত।বিশেষত প্রজনন বা যখন অতিরিক্ত শক্তির প্রয়োজন হয়।যেমন ডিম পাড়ার সময় তখন দেওয়া যেতে পারে।দৈনিক দেওয়া ঠিক নয়। |
| কুসুম ফুলের বীজ (Safflower Seed) | বীজ ( মাঝে মাঝে ) | এটিও ফ্যাটযুক্ত।সূর্যমুখীর চেয়ে ভালো হলেও মাঝে মাঝে দেওয়া ভালো। |
| সরিষা ( Mustard Seed ) | বীজ ( মাঝে মাঝে ) | অল্প পরিমানে এবং মাঝে মাঝে দেওয়া যেতে পারে। |
| বিভিন্ন ধরনের ফল | মাঝে মাঝে (পরিপূরক) | স্বাস্থ্যকর হলেও , এর মিষ্টির কারণে অল্প পরিমাণ এবং মাঝে মাঝে ট্রিট হিসাবে দেওয়া উচিত। |
| কচি ঘাসের পাতা | প্রধান / দৈনিক (শাক-সবজি) | |
| শাকসবজি ( পালং, কলমি , পুদিনা, সজনে, নিম এবং ধনেপাতা) | এই সবুজ শাক গুলো খুব গুরুত্বপূর্ণ। এগুলো প্রতিদিন বা প্রায় প্রতিদিন বীজের সাথে দেওয়া উচিত। এগুলো ভিটামিন এবং খনিজে ভরপুর |
এই খাবারগুলো নিয়ম মেনে খাবারের লিস্ট করে খাওয়ালে লাভ বার্ড পাখির চাহিদা পূরণ
হবে আশা করি বুঝতে পেরেছেন কিভাবে খাওয়াতে হবে। খাবার প্রতিটা
প্রাণীর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিশেষ করে যেসব প্রাণীকে বন্দী রাখা হয় এসব
লাভ বার্ড পাখিগুলো সাধারণত খাঁচায় বন্দী করে পালন করা হয় তাই অবশ্যই সঠিক
মাত্রায় এবং সঠিকভাবে তাদের খাবার সরবরাহ করতে হবে যাতে করে তাদের শরীরে কোন
ভিটামিন এর ঘাটতি না সৃষ্টি হয়।
লাভ বার্ডের প্রজনন পদ্ধতি ও ডিম বাচ্চার সফল পরিচর্যা
লাভ বার্ডের প্রজনন পদ্ধতি একটি আনন্দদায়ক কিন্তু যত্নশীল প্রক্রিয়া প্রজননের
সময় থেকে শুরু করে বাচ্চা হওয়া পর্যন্ত এবং বাচ্চা বড় হওয়া পর্যন্ত অর্থাৎ
জন্মের এক মাস পর্যন্ত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ এ সময় যত্ন বা খাবার এর
ব্যতিক্রম হলে বা ভুল হলে অনেক সময় ডিম থেকে বাচ্চা ফোটে না আবার বাচ্চা ফুটলেও
বাচ্চাকে ঠিকমতো বাঁচানো সম্ভব হয় না প্রাকৃতিক পরিবেশে সাধারণত পাখিটার বাচ্চা
যত্ন নিজে নিতে পারে কিন্তু খাঁচায় যখন পালন করা হয় তখন কিন্তু পাখির নিজে নিজে
যত্ন নিতে পারে না কারণ তার প্রয়োজনীয় জিনিস সরবরাহ করতে হবে তার প্রয়োজনীয়
জিনিস যদি সে না পায় তাহলে বাচ্চা বাঁচানো কষ্টকর হয় নিচে ধাপে ধাপে বুঝিয়ে
দিচ্ছি।
জোড়া গঠনঃ
লাভ বার্ড সাধারণত জোড়া গঠন করে জীবিকা বহন করে অর্থাৎ একবার যদি জোড়া হয়ে
যায় তাহলে সারা জীবন তার সাথেই বা একটি জোড়ার সাথেই জোর আবদ্ধ ভাবে থাকে জোড়া
গঠন বেশ জটিল প্রক্রিয়া অনেক সময় দেখা যায় যে একটি পুরুষ পাখি এবং একটি মেয়ে
পাখি জোড়া নেয় না তার জন্য বেশ কিছু পদ্ধতি অবলম্বন করতে হয় সঠিক জোড়া না হলে
সঠিক ডিম বাচ্চা করা অসম্ভব হয়ে পড়বে।তাই জোড়া মেলানোর সময় খুবই গুরুত্বপূর্ণ
ভাবে পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে। জোড়া নির্বাচন করার জন্য সাধারণত ১০ থেকে ১২ মাস
বয়সী একটি পুরুষ ও একটি মেয়ে পাখি লাগবে।
বাসা তৈরিঃ
কাঠের বক্স ব্যবহার করা যেতে পারে আবার মাটির হাড়ি ও ব্যবহার করে যেতে পারে তবে
সাইজ অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কাঠের বক্স এর ক্ষেত্রে সাইজ - ৮ ইঞ্চি X৮
ইঞ্চিX ১০ ইঞ্চি আর যদি মাটির হাঁড়ী ব্যবহার করা হয়।তাহলে মাজারি সাইজ
মাটির হাঁড়ী ব্যবহার করতে হবে ।
বাসা কাঠের বক্স বা মাটির হাঁড়ি যা দিয়ে বানানো হোক না কেন তার ভিতরে বিভিন্ন
ধরনের বাসা বানানো উপকরণ লাগবে।সেসব উপকরণ পাখি যাতে সহজেই পেয়ে যায় তার জন্য
খাচায় পর্যাপ্ত পরিমাণে নারিকেলের পাতা, তাল পাতা, শুকনো খড় বা কাঠের
গুড়া দেয়া থাকতে হবে।যাতে মা পাখি বা মেয়ে পাখি নিজেই প্রয়োজন মতো
বাসা বানানোর উপকরণগুলো নিয়ে নিতে পারে।বাসা বানানোর মূল দায়িত্ব থাকে
মেয়ে পাখির হাতে বা মা পাখির হাতে। মা পাখি নিজেই সব উপকরণগুলো সংগ্রহ
করে বক্স বা হাঁড়ির ভেতরে নিয়ে যায়।
প্রজনন সময়ের খাবারঃ
পাখির অন্যান্য সময় খাবারের থেকে প্রজনন সময়ের খাবার অর্থাৎ প্রজনন সময় থেকে
শুরু করে বাচ্চা হওয়া এবং বাচ্চা বড় হওয়া পর্যন্ত খাবারের দিকে বিশেষ নজর
রাখতে হবে। তার জন্য খাবারের তালিকা করে নিতে হবে এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন ও
পুষ্টি সম্পূর্ণ খাবার সরবরাহ করতে হবে।
| বীজ মিশ্রণ | ফল ও সবজি | ক্যালসিয়াম | সেদ্ধ ডিম |
|---|---|---|---|
| মিলেট, সূর্যমুখী বীজ , কাউন, ওটস | আপেল, গাজর, পালং শাক, ব্রকলি, | কাটলবোন (Cuttle bone ) বা মিনারেল ব্লক দিতে হবে। | সপ্তাহে ২-৩ দিন দিন এতে প্রোটিন বাড়ে। |
ডিম ও ডিম ফোটা (ইনকিউবেশন) ঃ
স্ত্রী পাখি সাধারণত তিন থেকে ছয়টি ডিম দেয় এবং ডিম ফুটে বাচ্চা হতে প্রায় ২১
থেকে ২৩ দিন পর্যন্ত সময় লাগে এই ২১ থেকে ২৩ দিন পর্যন্ত স্ত্রী পাখি ডিমকে তাপ
দেই বা ইনকিউবেশন করে পুরুষ পাখির এই সময়ের কাজ হচ্ছে বাসা পাহারা দেওয়া এবং
স্ত্রী পাখি যেহেতু ডিমকে তাপ দেই তাই সব সময় বাইরে বের হয় না এই সময়ে খাবারের
যোগান পুরুষ পাখি স্ত্রী পাখিকে যোগান দেয় এবং একটি কথা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ
ডিম পাড়ার সময় পাখির হাড়িতে বা বক্সে বারবার দেখা উচিত নয় তারা এ সময়
পরিবেশটা নিরিবিলি চাই।
বাচ্চা ফোটার পর পরিচর্যাঃ
বাচ্চা ফোটার পর প্রায় প্রথম সপ্তাহ থেকে পাঁচ থেকে ছয় সপ্তাহ পর্যন্ত বাচ্চা
যত্ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এ সময় বাচ্চার অতিরিক্ত যত্ন নিতে হবে অর্থাৎ
বাচ্চাকে তো আর পরিচর্যা করতে হবে না বাচ্চার মা-বাবাকে পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ খাবার
সরবরাহ করতে হবে আপনার সুবিধার্থে এই পদ্ধতি ও ধাপে ধাপে বর্ণনা করে
দিচ্ছে।
প্রথম সপ্তাহঃ মা বাবা পাখি নিজেরাই খাওয়াবে বাচ্চাকে নিজে থেকে
অতিরিক্ত কিছু খাবার প্রয়োজন নেই। বাসা পরিষ্কার বা অন্য কোন পদ্ধতি অবলম্বন
করবেন না শুধু বাইরে থেকে পর্যবেক্ষণ করবেন এবং পুষ্টিকর খাবার অর্থাৎ বাচ্চাকে
সুস্থ সবল রাখার জন্য যে খাবার প্রয়োজন তা বাবা-মা পাখিকে সরবরাহ
করুন।
দ্বিতীয় থেকে চতুর্থ সপ্তাহঃ বাচ্চার চোখ খুলে যাবে এই সময়ে পালক
গজাতে শুরু করবে আর তার জন্য বাচ্চার অতিরিক্ত শক্তির প্রয়োজন হবে বা তার শরীরে
অতিরিক্ত পুষ্টির প্রয়োজন হবে।তার জন্য বাচ্চাকে পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ খাবার সরবরাহ
করতে হবে। মা বাবা পাখি যা খাবে তাই এ সময় বাচ্চা ও খাবে। সেদ্ধ ডিম নরম ফল দিন
এতে মা পাখি সহজে বাচ্চাকে খাওয়াতে পারবে।
পঞ্চম ও ষষ্ঠ সপ্তাহ ঃ বাচ্চা উড়তে শুরু করবে আলাদা খাঁচায় স্থানান্তর
করুন যখন তারা নিজেরা খেতে পারবে । কারণ তখন যদি বাচ্চা একই
খাঁচায় থাকে তাহলে মারামারি শুরু করবে আহত হতে পারে তাই এ সময়
খাঁচা আলাদা করে দিতে হবে।
খাঁচা পরিষ্কার ও বাতাস চলাচল উপযোগী রাখুন তাপমাত্রা ২৫ থেকে ৩০ ডিগ্রি বজায়
রাখতে হবে। ধোয়া বা ধুলাবালি না থাকে সেই ব্যবস্থা করতে হবে। প্রজনন ঋতু সাধারণত
বসন্ত ও শরৎকাল এ সময় খেয়াল রাখতে হবে ।
লাভ বার্ডের রোগ বালায় ও চিকিৎসা
পাখি পালন করলে তার রোগবালায় থাকবে এটাই স্বাভাবিক তাই পাখি পালন করলে রোগ বালায়
থেকে দ্রুত আরোগ্য লাভ করে এবং চিকিৎসা সহজে পাওয়া যায় বা প্রাথমিক চিকিৎসার
নিজেরাই করা যায় তার জন্য পাখির রোগ এবং চিকিৎসা সম্বন্ধে নিচে আমার
আর্টিকেলে বর্ণনা করলাম।
| রোগের নাম | লক্ষন | সম্ভাব্য কারন | চিকিৎসা ও প্রতিরোধ |
|---|---|---|---|
| কোল্ড বা ঠাণ্ডা লাগা | হাঁচি, নাক দিয়ে পানি পড়া, চোখে পানি বা ডানা ঝুলে থাকা। | ঠাণ্ডা বাতাস, তাপমাত্রা হঠাৎ পরিবর্তন। | খাঁচা উষ্ণ স্থানে রাখুন (২৫-৩০ ডিগ্রি সেন্সিলিয়াস, গরম পানির ভাপ দিন, ভিটামিন C ও গরম খাবার দিন। |
| ডায়রিয়া(পাতলা পায়খানা) | পাতলা সবুজ/সাদা পায়খানা, দুর্বলতা | নষ্ট খাবার, পানি পরিবর্তন না করা | খাবার পরিস্কার দিন, ইলেক্ট্রোলাইট বা পিডিয়ালাইট মেশানো পানি দিন পশু চিকিৎসার পরামর্শে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করুন। |
| ফেদার প্লাকিং (পালক ছেঁড়া) | নিজেই পালক কামড়ানো, চুলকানি | মানসিক চাপ, একঘেয়েমি, ভিটামিন এর অভাব | খেলনা দিন সঙ্গী রাখুন।মাল্টিভিটামিন (Vit-A,D,E) দিন। |
| মাইট বা পোকা ( Parasite Attack) | শরীর চুলকানি পালক ঝরা, রাতে অস্থিরতা | খাঁচা নোংরা পোকা মাকড়ের আক্রমণ | খাঁচা ও বাসা জীবাণুমুক্ত করুন ( Virkon S বা Dettol ) মিশ্রণে পরিষ্কার বিশেষ পাখির অ্যান্টি মাইট স্প্রে করুন। |
| নিউমোনিয়া | শ্বাসকষ্ট মুখ খোলা রেখে শ্বাস নেওয়া, চোক বন্দ রাখা | ঠাণ্ডা বা ধুলাবালি | উষ্ণ জায়গা রাখুন। পশু চিকিৎসা করে পরামর্শে অ্যান্টিবায়োটিক দিন । |
| এগ বাইনডিঙ্গ ( ডিম আটকিয়ে যাওয়া) | স্ত্রি পাখি ডিম দিতে না পেরে কষ্ট পাচ্ছে, নীচে বসে থাকে , পেট ফুলে যায়। | ক্যালসিয়াম অভাব | গরম পানির ভাব দিন ক্যালসিয়াম সিরাপ দিন গুরুতর হলে ভেটেনারি ডাকুন |
| নিউক্লিয়াস ও ভাইরাল সংক্রমণ | ঘাড় ঘুরে যাওয়া ভারসাম্য হারানো | ভাইরাস সংক্রমন | এটি প্রাণঘাতই আক্রান্ত পাখি আলাদা রাখুন। ভ্যাকসিন প্রয়োগে প্রতিরোধ সম্ভব। |
| ভিটামিন ঘাটতি | খাওয়ার অনীহা পালক ঝরা, দুর্বলতা | অসম্পূর্ণ খাদ্য | খাদ্য তালিকায় ফল সবজি ও মাল্টিভিটামিন যোগ করুন |
লাভ বার্ড পালনে ভুল ও সর্তক
লাভ বার্ড সুন্দর সামাজিক ও বুদ্ধিমান পাখি।তবে অনেক সময় নতুন পালনকারীরা কিছু
সাধারণ ভুল করে বসেন যার ফলে পাখি অসুস্থ হয় এমনকি মারা যেতে পারে আজকের
আর্টিকেলে কয়েকটি পদ্ধতি বলছি যেগুলো সাধারণত মানুষ ভুল করে থাকে বা যেসব
ভুলগুলো করা যাবে না লাভ বার্ড পালন করতে গেলে ।
একা পাখি পালনঃ
লাভ বার্ড খুব সামাজিক পাখি একা থাকতে চাই না , এক রাখলে পাখি আকরমানাত্মক হয়ে
ওঠে এরা সব সময় জড়াই থাকতে পছন্দ করে তাই সবসময় জোড়ায় রাখুন একা থাকলে
বিভিন্ন ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হবে ।
ছোট খাচা ব্যবহার ঃ
অনেকে না বুঝে ছোট খাঁচা বা যেখানে কোন খাঁচা ব্যবহার করে যা পাখি পালনের
ক্ষেত্রে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। পাখি মানসিক চাপের কারণ থেকে পাখি স্টেট গোস্ত
হয় এবং বিভিন্ন ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হয়। পাখির খাঁচা কমপক্ষে দুই ফিট লম্বা
দেড় ফুট চওড়া এবং দেড় ফুট উচ্চতা থাকতে হবে এবং মাটি থেকে মোটামুটি দেড় ফুট
উঁচু স্থানে রাখুন।
সরাসরি রোদ ধোয়া বা বাতাসেঃ
সরাসরি রোদ ধোয়া বা বাতাসে রাখালে সর্দি শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যা হতে পারে।
সরাসরি রোদ লাগলে বা ধোয়া বা বাতাসের কারণ থেকে পাখি খুব সংবেদনশীল তাই এইসব
পাখিকে রাখতে হবে আলো বাতাস কিন্তু নিরাপদ স্থানে। যেখানে বাতাস এলেও কম
আসে বা ধুলোবালি মুক্ত থাকে।
খাবার পানি বা খাবারঃ
খাবার পানি প্রতিদিন পরিবর্তন করে দিতে হবে অর্থাৎ যে পানি আমরা পাখিকে দিব সেই
পানি যদি সম্পূর্ণ পাখি না খেয়ে থাকে। পরের দিন পানি চেঞ্জ করে দিতে হবে
প্রয়োজনে দিনে দুইবার পানি চেঞ্জ করতে পারলে আরো ভালো ।খাবার বিভিন্ন ধরনের
বীজ খায় এবং খোসাগুলো পড়ে থেকে বা পাখির আশেপাশে পড়ে থাকে সেক্ষেত্রে
সেসব জিনিস গুলো পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে যেগুলো খোসা বাইরে ফেলে দিতে হবে
এবং এগুলো যদি না করা হয় তাহলে পাত্রে বা আশেপাশে পোকামাকড় হয়। যেমন পিপড়া
ইদুর বা বিভিন্ন পোকা আক্রমণ সৃষ্টি হবে এগুলো থেকে রক্ষা করার জন্য সব সময়
পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে ।
পাখি যেখানে থাকে সেখানে শান্ত পরিবেশ রাখতে হবে অতিরিক্ত শব্দ বা স্পর্শ
মানসিক চাপ ও আচরণগত সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। পাখিকে নিয়ম করে গোসল করার
ব্যবস্থা করে দিতে হবে গোসল না করলে পাখিদের বিভিন্ন শৈলী বিভাজনে পোকামাকড়
আক্রমণ হবে প্রতিদিন না সপ্তাহে দুই তিন গরমে হালকা পানি দিয়ে গোসল করার
ব্যবস্থা করতে হবে ।
লাভ বার্ড খামার তৈরির কৌশল
লাভ বার্ড অত্যন্ত লাভজনক এবং দামী একটি পাখি লাভার খামার তৈরি করা একটি লাভজনক ও
আনন্দদায়ক উদ্যোগ যদি পরিকল্পনা ও যত্ন সহকারে লাভ বার্ডের পালন করা হয় তাহলে
এটি একটি লাভজনক ব্যবসা। কিন্তু যদি যত্নসহ ঠিকমতো নিতে না পারা যায় তাহলে খামার
তৈরি লাভজনকের বদলে লস হতে পারে কারণ লাভ বার্ড সংবেদনশীল একটি পাখি। চলুন আজকে
আর্টিকেল আলোচনা করব কিভাবে একটি লাভজনক লাভ বার্ড খামার তৈরি করা সম্ভব।
প্রথমে একটি শান্ত বাতাস চলাচলযোগ্য রোদ বৃষ্টি থেকে সুরক্ষা জায়গায় বেছে নিতে
হব। কোন জায়গাতে খামার করতে হবে তা অতান্ত গুরুতপূর্ণ একটি বিষয় এবং যে
জায়গাটিতে রাখা হবে অর্থাৎ খামার করা হবে সেখানকার তাপমাত্রা ২৫ ডিগ্রি থেকে ৩০
ডিগ্রি সেলস পর্যন্ত রাখা যাবে ।/পর্যাপ্ত প্রাকৃতিক আলো দরকার সকাল বিকালে সূর্য
লোক ভালো থাকতে হবে তবে অতিরিক্ত নয়। যদি ঠান্ডা জায়গায় হয় তাহলে শীতকালে
হিটার বাল্ব দিয়ে উষ্ণতা ঠিক রাখতে হবে গরমকালে কুলিং ব্যবস্থা রাখতে হবে।
দুই ধরনের খাচা ব্যবহার করা যায় এবং খাঁচা ব্যবহার করার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ
ভাবে জিনিসটা উল্লেখ করতে হবে অর্থাৎ খাঁচা নির্বাচন অত্যন্ত কার্যকরী
পদক্ষেপ দুই ফিট লম্বা দেড় ফুট চওড়া এবং দেড় ফুট উচ্চতা সম্পন্ন খাঁচা ব্যবহার
করতে হবে খাঁচার ভিতর একটি নেক্সট বক্স যেটা সাইজ ৮X ৮X ১০ ইঞ্চি । রাখতে
হবে আবার বড় এক জায়গায় অনেক পাখি একসাথে রাখা যায় অর্থাৎ পাখি ডিম
বাচ্চা করবে তখন জোড়ায় জোড়ায় খাঁচার মধ্যে রাখা ভালো। ডিম বাচ্চা করার জন্য
প্রতিটি পাখির অর্থাৎ প্রতিটি পাখির জোড়া এর বয়স ১০ থেকে ১২ মাস হতে হবে
না হলে ভালো ডিম বাচ্চা আশা করা যায় না।
পাখির ডিম বাচ্চা করার জন্য পাখির খাঁচায় বিভিন্ন ধরনের খড় এবং শুকনো ঘাস
নারিকেলের ছোবড়া নারিকেল পাতা এসব রাখা যায় যাতে করে পাখি তার প্রয়োজন মত
সবকিছু নিয়ে পাখির বাসা করতে পারে। পাখি যেতে সম্পন্ন ভাবে খেতে পারে অর্থাৎ
খাওয়ার ব্যাঘাত না ঘটে তার জন্য বিভিন্ন রকম খাবার যেগুলো আমার আর্টিকেলে উল্লেখ
করা আছে সেগুলো পর্যাপ্ত পরিমাণে রাখতে হবে পাখিকে সুস্থ রাখার জন্য পাখির
দেখাশোনা করতে হবে এবং পাখির খাচা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
লাভ বার্ড প্রশ্ন ও উত্তরঃ
প্রশ্নঃ লাভ বার্ড পাখি পালন পদ্ধতি কি জটিল ?
উত্তর ঃ না লাভ বার্ড পালন পদ্ধতি খুব একটা জটিল না সঠিকভাবে
নিয়ম শৃঙ্খলা মেনে পালন করলে সহজেই লাভ বার্ড পালন করা যায়।
প্রশ্নঃ লাভ বার্ড জোড়া একবারে কয়টি ডিম দেয়?
উত্তর ঃ লাভ বার্ড পাখি প্রথম জোড়া সাধারণত দুই থেকে তিনটি ডিম দেয়
দ্বিতীয়বার তৃতীয়বার ধীরে ধীরে বয়স বাড়ার সাথে সাথে এক জোড়া লাভ বার্ড ছয়
থেকে সাতটি ডিম দেয়।
প্রশ্নঃ লাভ বার্ড পাখি কত বছর বয়সে ডিম দেয়?
উত্তরঃ একটি পূর্ণবয়স্ক লাভ বার্ডের জোড়া অর্থাৎ ১০ থেকে ১২ মাস
বয়সে ডিম দিয়ে থাকে।
প্রশ্নঃ একটি লাভ বার্ড জোড়া কতদিন বাঁচে?
উত্তরঃ সাধারণত ১৫ বছর পর্যন্ত বাঁচতে পারে তবে অভিযুক্ত পরিবেশ পেলে অনেক
সময় ২০ বছর পর্যন্ত বাঁচে।
প্রশ্নঃ লাভ বার্ড পাখির খাঁচাতে পালনে খাঁচার সাইজ কত হবে?
উত্তরঃ লাভ বার্ড পাখির খাঁচার সাইজ ২৪ ইঞ্চি X ১৮ ইঞ্চি X ১৮ ইঞ্চি
প্রশ্ন: লাভ বার্ড পাখি কি খাবার খায়?
উত্তর: লাভ বার্ড পাখি সাধারণত বিভিন্ন ধরনের বীজ খায় যেমন
কাউন, বজরা, চীনা, সূর্যমুখীর বীজ মাঝে মাঝে সরিষা খাওয়াতে হয়
এবং বিভিন্ন রকম সবজিও খাওয়ানো যায় যেমন গাজর বরবটি ব্রকলি বিজয়ের টাইপের ফল
পেঁপে সহ বেশ কিছু খাবার।
শেষ কথাঃ
লাভ বার্ড অত্যন্ত সংবেদনশীল এবং বেশ সুন্দর একটি পাখি ছোট আকারের এবং বিভিন্ন
কালারের হওয়ার কারণে পাখিটি সবার পছন্দের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে। বর্তমানে
পাখিটিকে বিভিন্ন মানুষ শখের বসে পালন করে সঠিকভাবে যত্ন নিলে লাভ বার্ড পাখি
পালন ব্যবসায়িকভাবে অত্যন্ত লাভজনক একটি ব্যবসা।
আজকের আর্টিকেলে লাভ বার্ড পালনের ক্ষতিকর দিক এবং সুবিধার দিক উভয়ে অত্যন্ত
সুন্দরভাবে আলোচনা করার চেষ্টা করেছি আশা করি উপরোক্ত আর্টিকেলের সমস্ত বক্তব্য
যদি সঠিকভাবে কেউ পরিচালনা করে তাহলে লাভ বার্ড পালনে তার কোন সমস্যা হওয়ার কথা
না। আজকের মত শেষ করলাম কথা হবে পরবর্তী কোনো আর্টিকেলে।



টাইম বিডি ২৪ নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url