ঘন কুয়াশায় উত্তরাঞ্চলের শীতের আগমনী বার্তা

ঘন কুয়াশায় উত্তরাঞ্চলের শীতের আগমনী বার্তা, বাংলাদেশ ষড়ঋতুর দেশ অর্থাৎ বাংলাদেশে ছয়টি সমন্বয়ে তৈরি হয়েছে একটি বছর বছরের শুরুতেই  গ্রীষ্ম এর পর বর্ষা, শর্‌ হেমন্ত, শীত ও বসন্ত। ঋতুচক্রের এই পরিক্রমায় আজ আলোচনা করব শীতকাল নিয়ে। 

ঘন কুয়াশায় উত্তর অঞ্চলের শীতের আগমনী বার্তা বাংলাদেশের প্রতিটি ঋতুর দুটি করে মাস রয়েছে অর্থাৎ গ্রীষ্মকাল বৈশাখ এবং জোষ্ঠ্য মাস তেমনি বর্ষাকাল আষাঢ় ও শ্রাবণ মাস, শরৎকাল ভাদ্র ও আশ্বিন মাস, হেমন্তকাল কার্তিক ও অগ্রহায়ণ মাস, শীতকাল পোস্ট ও মাঘ মাস এবং সর্বশেষ ঋতু বসন্তকাল ফাল্গুন ও চৈত্র মাস। আজকের আর্টিকেলে বর্ণনা করবো শীতকাল নিয়ে। 

সূচীপত্র ঃ- ঘন কুয়াশায় উত্তরাঞ্চলের শীতের আগমনী বার্তা

বাংলাদেশের ঋতুচক্র

বাংলাদেশে রয়েছে ছয়টি ঋতু যা আমি আগেই বলেছি গ্রীষ্ম, বর্ষা , শরৎ,  হেমন্ত,  শীত ও বসন্ত এই ছয় ঋতু মিলে বাংলাদেশের আবহাওয়া পরিবর্তন হয় এবং একটি বছর পূর্ণ হয়। যদিও ষড়ঋতুর দেশ বাংলাদেশ বলা হয়। কিন্তু মূলত সাধারন মানুষের দৃষ্টিকোণ থেকে বাংলাদেশে দুটি আবহাওয়ার পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায় একটি গ্রীষ্মকাল অর্থাৎ গরমকাল আর অন্যটি শীতকাল।  বাংলাদেশের আবহাওয়া পরিক্রমায় গ্রীষ্মকালের অর্থাৎ গরমকালের সময়কাল দীর্ঘ প্রায় ৮ থেকে ৯ মাস বছরের বাকি তিন থেকে চার মাস থাকে শীতকাল । যদিও বর্তমানে আবহাওয়ার পরিবর্তন ব্যাপক হাওয়ায় শীতকাল শুধুমাত্র অনুভূত হয় দুটি মাস পৌষ এবং মাঘ মাস।  যা ইংরেজিতে ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাস বাকি বাকি মাসগুলো আবহাওয়া বেশ গরম হয়ে থাকে শীতের শুরুতে একটি মাস এবং শীতের শেষের একটি মাস হালকা শীত থাকে বাকি ৮ মাসেই ব্যাপক গরম অনুভূত হয় বাংলাদেশ। 
ছয় ঋতুর দেশ বাংলাদেশ হলেও আজকে আমাদের আর্টিকেলে আলোচনার বিষয় হচ্ছে শীতকাল অর্থাৎ ঘন কুয়াশায় উত্তর অঞ্চলের শীতের আগমনী বার্তা শীতের শুরুতে আগমনী বার্তা । হিসেবে আবহাওয়ার পরিবর্তনে বেশ কিছু লক্ষণ অনুভূত হয় তারও একটি পরিবর্তন কুয়াশা শেষ রাত্রির দিকে বা সকালের দিকে কিছু বিশেষ অংশে কুয়াশা দেখা যায় এবং শেষ রাতে কুয়াশার পরিমাণ বাড়তে থাকে তাই একথা বলাই যায় কুয়াশা একটি অন্যতম আবহাওয়া পরিবর্তনের লক্ষণ হিসেবে গণ্য করা যায়।  তাই আজকের আর্টিকেলের নাম দেওয়া হয়েছে ঘন কুয়াশায় উত্তর অঞ্চলের শীতের আগমনী বার্তা।
শীতের আগমনে বার্তা হিসেবে এই উত্তর অঞ্চল কেন?  তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ বা উৎকৃষ্ট উত্তর হচ্ছে বাংলাদেশের তৃতীয় সর্বোচ্চ পর্বত শৃঙ্গ বরফ ঢাকা কাঞ্চনজঙ্ঘা বাংলাদেশের এই উত্তর অঞ্চলের  থেকে বেশ কাছে তাই আজকের আর্টিকেলের নাম দেয়া হয়েছে উত্তর অঞ্চলের শীতের আগমনী বার্তা অর্থাৎ বাংলাদেশে শীতের প্রকোপ সবচাইতে বেশি এই উত্তর অঞ্চলে এবং শীতের সবচাইতে কষ্টে ভোগে এই উত্তরাঞ্চলের লোকজন।

কুয়াশা ও শীতের আগমন এক প্রাকৃতিক চক্র

এখন বাংলাদেশ অক্টোবর মাস চলছে যা বাংলা মাসের কার্তিক মাসের শেষের দিক এবং আর কিছুদিন পর শুরু হবে অগ্রাহায়ন মাস । অর্থাৎ শীতকাল আসতে এখনো প্রায় দুই থেকে তিন মাস বাকি তারপরও উত্তরাঞ্চলে বেশ কিছু জায়গায় শেষ রাত্রির দিকে এবং খুব ভোরে শীতের আগমনে বার্তা হিসেবে কিছু লক্ষণ পরিলক্ষিত হচ্ছে। আরো ব্যাপকভাবে বলতে গেলে বাংলাদেশে মূলত শীতকাল শুরু হয় ইংরেজি মাসের নভেম্বরের শেষ ভাগে এবং এই শীতকাল ডিসেম্বর ও জানুয়ারি চলমান থেকে ফেব্রুয়ারি মাসে গিয়ে শেষ হয়।
তবে উত্তরাঞ্চলের এ শীতের সূচনা হয় অনেক আগেই দেশের অন্যান্য জেলা থেকে।  অক্টোবরের শেষ সপ্তাহ থেকেই রাতের তাপমাত্রা অন্য সময়ের তাপমাত্রা থেকে নিচে নেমে আসে যা বর্তমানে সে তাপমাত্রা রাত্রিতে  দাঁড়াচ্ছে ১৮ থেকে ২০ ডিগ্রি পর্যন্ত । শীতকালের  শুরুতেই তাপমাত্রা থাকলেও দিন বাড়ার সাথে সাথে অর্থাৎ ডিসেম্বর জানুয়ারের দিকে উত্তরাঞ্চলে শীতের তাপমাত্রা প্রায় দশ ডিগ্রী সেলসিয়াস এর নিচে নেমে আসে। কুয়াশার মূল কারণ হলো বাতাসে থাকা জলীয় বাষ্পের ঘনত্ব বৃদ্ধি ও রাতের তাপমাত্রা দুটো কমে যাওয়া।  যখন বায়ুর তাপমাত্রা  শিশির বিন্দুতে পৌঁছায় তখন বাতাসের বাষ্প  তরল রূপ নেই এবং  ঘন কুয়াশার তৈরি হয়।

উত্তরাঞ্চলের নদী খাল জলাশয় ও উন্মুক্ত ক্ষেতের পরিমাণ বেশি থাকায় সেখানে আদ্রতা বেশি । ফলে ঘন কুয়াশা অন্য অঞ্চলের তুলনায় দ্রুত তৈরি হয় স্থানীয়ভাবে মানুষ বলে ভোরে হাত সামনে তুলে ও দেখা যায় না এমন এটা সে প্রাকৃতিক সংকেত যে শিত আসছে। খালি বিল নদী নালার পানির ওপরে খুব ভোরে অর্থাৎ  সকালে দেখা যায় সাদা সাদা ধোঁয়া যা শীতের আগমনে বার্তা প্রকাশ করে। উত্তর অঞ্চলে এই মৌসুমি বায়ুর জন্য গরমকালেও বেশ গরম। 
অনেকে আশ্চর্য হবে শীতকালে আসলে প্রচণ্ড রকম ঠান্ডা অথচ সে একই ব্যক্তি যদি গরম কালে এসে দেখে প্রচণ্ড রকম গরম তার বিশ্বাস করতে কষ্ট হবে যে শীতকালে সেই একই জায়গায় ঠান্ডার কারণে টিকা মুশকিল হয় । অথচ গরমকালে সেই একই স্থানে গরমের জন্য টিকা কষ্টকর হয়ে ওঠে প্রকৃতির এ লীলা খেলা সত্যিই বুঝা দুষ্কর। 

ভূগোল ও আবহাওয়া উত্তর অঞ্চলের বিশেষ বৈশিষ্ট্য

পুরো বাংলাদেশের ভূগোল ও আবহাওয়া দেশের অন্য অঞ্চলের থেকে একটু ভিন্ন তাই এই অঞ্চলের আবহাওয়া বা ভূগোল বিষয়ে আলোচনা না করলেই নয়,  উত্তরাঞ্চলের ভৌগোলিক অবস্থান শীতল বাতাসের জন্য অত্যন্ত উপযোগী হিমালয়ের নিকটবর্তী এ অঞ্চল সরাসরি উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে আসা ঠান্ডা বাতাসের প্রভাবে থাকে। বিশেষভাবে বলতে গেলে তিস্তা মহানন্দা নদীর তীরবর্তী অঞ্চল যেমন পঞ্চগড়,  ঠাকুরগাঁও  ও রংপুরের উন্মুক্ত বিশাল এ প্রান্তর কুয়াশা জমার জন্য আদর্শ স্থান বলা হয় আর যার ফলে এ অঞ্চলে শীতের আগমনী বার্তা হিসেবে ঘন কুয়াশায় ঢাকা থাকে। 
অর্থাৎ দেশের অন্যান্য অঞ্চল যখন গরম অনুভব করে তখন অঞ্চল সকালবেলা বা ভোরবেলা এবং শেষ রাত্রির দিকে শীতের অনুভব দৃশ্যমান তাই এই অঞ্চলের দিকে এ কথা বলাই যায় ঘন কুয়াশায় উত্তর অঞ্চলের শীতের আগমনী বার্তা । আরো কিছু বিষয় আলোচনা না করলেই নয় বাংলাদেশের  অভিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী জানুয়ারি মাসে উত্তর অঞ্চলের গড় সর্বজনীন তাপমাত্রা হয় প্রায় ৭ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।  যা দেশের পুরনো অঞ্চলের তুলনায় প্রায় পাঁচ থেকে ৬ ডিগ্রি কম।

এবং ডিসেম্বর শেষ থেকে জানুয়ারি প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত পঞ্চগড় সহ এসব অঞ্চলের  রেকর্ড করা হয় এ শীতল আবহাওয়া,  কৃষি , পরিবেশ,  জীবনযাত্রা ও স্বাস্থ্য সব ক্ষেত্রেই ব্যাপক উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলে যার কারণে কিছু কিছু জায়গায় উপকৃত হলেও  অধিকাংশ জায়গায় বেশ ক্ষতির সম্মুখীন হয়। 

ঘন কুয়াশা ও কৃষি উপকার ও ক্ষতির বিশ্লেষণ

ঘন কুয়াশা দেখতে ভালো লাগলেও প্রকৃতির এক অন্য রূপ তৈরি হলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে এর উপকার হলেও ঘন কুয়াশা অভিশপ্তও বটে । কেন এ কথা বলা হচ্ছে তার কারণস্বরূপ বলা যায় সূর্যলোক অর্থাৎ সূর্যের আলো কম পাওয়া যায় কুয়াশার কারণে সূর্যের আলো সরাসরি পোঁছাতে পারে না যার ফলে কৃষি ফসলের পাতা পোড়া রোগ,  ধান ও সবজির পচন সব বিভিন্ন রোগ দেখা যায় প্রতিটা জায়গায় । 

এবং  প্রতিটা দেশেই পরিবহন ব্যবস্থা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ শুধুমাত্র মানুষ যাতায়াতের জন্যই পরিবহন ব্যবহার করা হয় না বিভিন্ন জিনিসপত্র এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাওয়ার জন্য দরকার হয় পরিবহন। ঘন কুয়াশার কারণে এই পরিবহন ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত  হয় অর্থাৎ কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পণ্য এক স্থান থেকে অন্য স্থান নিয়ে যেতে পারেনা বা দেরিতে পৌঁছাতে হয় ঘন কুয়াশার কারণে বিভিন্ন পরিবহন ব্যবস্থায় অর্থাৎ পাকা রোডে যেসব রোডে বাস ট্রাক বা অন্যান্য যানবাহন চলাচল করে সেসব জায়গায় ড্রাইভারগণ ঠিকমতো গাড়ি চালাতে পারে না। 

ঘন কুয়াশার কারণে যার ফলে প্রায়ই শীতের সময় দেখা যায় দুর্ঘটনা ঘটে দেশে দুর্ঘটনা পরিমাণ বেড়ে যায় আবার কখনো তাপমাত্রা অতিরিক্ত কমে গেলে তরুণ ফসল মারা যায় । মাছ চাষ থেকে শুরু করে বিভিন্ন চাষ পদ্ধতিতে বাধা সৃষ্টি হয় দেশের উত্তর অঞ্চল এর একটি জেলা দিনাজপুর এর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে প্রতিবছর ডিসেম্বরের প্রথমদিকে ঘন কুয়াশা ও শিশির এর কারণে প্রায় ৫ থেকে ৭ শতাংশ সবজি ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

জীবনযাত্রার প্রভাব গ্রামীণ ও শহরের বাস্তবতা

শীতকাল সবার জন্য সুখবর হয় না,  হ্যাঁ এটা ঠিক শীতকালের সৌন্দর্য অনেক হলেও রয়েছে ঠিক বিপরীত দিক শীতকালে উত্তর অঞ্চলের মানুষের গ্রামীণ জীবন অত্যন্ত কষ্টদায়ক হয়ে পড়ে।  এটা শুধু আবহাওয়ার পরিবর্তন নয় একটি বাস্তব সংগ্রামে পরিণত হয়েছে। কারণ উত্তর অঞ্চল এর মানুষ নিম্ন আয়ের মানুষ অধিকাংশ মানুষ কৃষি নির্ভরশীল যার ফলে দিনমজুর,  কৃষক,  রিকশাচালক সহ বিভিন্ন মানুষগুলোকে কাজের খোঁজে বা আয় উপার্জনের জন্য এই ঘন কুয়াশার মধ্যেও বের হতে হয়। অনেক  কষ্টদায়ক এসব এলাকার লোকজনের এমনও মানুষ  রয়েছে যাদের  শীতবস্ত্র কেনার ক্ষমতা থাকে না যার ফলে এসব নিম্ন এর মানুষগুলোর জীবনে নেমে আসে অভিশাপ।

বস্ত্র তো থাকেই না শীতের কারণে শিশু ও বৃদ্ধদের মধ্যে নিউমোনিয়া ঠান্ডা জনিত কাশি ডায়রিয়া সাধারণ রোগে পরিণত হয় এসব রোগের প্রতিটা এলাকায় প্রকোপ দেখা যায় যার । ফলে অধিকাংশ মানুষ এরকম শীতের অসুখে ভোগে তবুও এ কষ্টের মাঝে মানুষের জীবনের ছন্দ খোঁজে নেয়
চুলোর পাশে বসে  ধোঁয়া ওঠা চা,  পিঠা পায়েসের গন্ধ,  পাটকলের আগুনে উষ্ণতা ভাগাভাগি যেন এসব  নিত্যদিনের সঙ্গী । আরেকটি কথা  আলোর পাশে অন্ধকার থাকবে এটা যেমন ঠিক তেমন অন্ধকারের পাশেও আলোর সম্ভাবনা দেখা দিবে শুধু যে কষ্ট হয়ে যায় শীতকাল তা কিন্তু নয়। 

শীতকাল অর্থাৎ ডিসেম্বর জানুয়ারি মাসে নতুন ফসল ওঠে যার ফলে কৃষকের আনন্দ। নতুন ফসল উঠবে এজন্য মোড়ে মোড়ে বিভিন্ন খাবারের দোকান বসে, ঘরে ঘরে নতুন ফসল ওঠার আনন্দ বিভিন্ন রকম পিঠা পুলি  খাওয়ার ধুম লেগে যায় নতুন চালের আটার দিয়ে  শীতকালে এই ধান ওঠার সময় মনে হয় প্রতিটা পাড়ায় পাড়ায় এক মানবিক মেলবন্ধন তৈরি হয়ে যায়।

গ্রামে গ্রামে যেমন শীতকাল সৌন্দর্যের পাশাপাশি বিভিন্ন কালো দিক রয়েছে শহরেও ব্যতিক্রমে নয়। শহরের বিভিন্ন রাস্তার পাশে অসহায় লোকজন বসবাস করে যাদের নেই সুন্দর বাড়ি সুন্দর অট্টালিকা বা শীত  নিবারণ করার মত ব্যবস্থা তারা  আসলে অনেক কষ্ট পায় । আবার কাজের জন্য শহরে বহু দিনমজুর থেকে শুরু করে রিক্সাওয়ালারা ভিড় জমায় শীতের সময় খুব সকালে বা দিনশেষে রাতে রিকশাচালকদের রিক্সা চালায় চালাতে বেশ কষ্ট পেতে হয়। 

পরিবহন ও দৈনন্দিন কার্যক্রমে প্রভাব

শীতকালে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কষ্টের দিক বা বিপদের কথা হচ্ছে এই সময় যোগাযোগ ব্যবস্থার খুব সমস্যা হয়ে পড়ে।  কুয়াশার জন্য পরিবহন থেকে শুরু করে যে কোন যোগাযোগ ব্যবস্থায় বেশ কষ্টসাধ্য এবং দুর্ঘটনার সম্বলিত হয়ে পড়ে।  কুয়াশায় যোগাযোগ ব্যবস্থার উপরে অর্থাৎ বাস ট্রাক সহ বিভিন্ন
পরিবহন চালাতে ড্রাইভারদের বেশ কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে কারণ রংপুর দিনাজপুর অঞ্চলে ডিসেম্বর জানুয়ারিতে প্রায় সকাল ন'টা থেকে দশটা পর্যন্ত রাস্তায় মাত্র ২০ থেকে ৩০ টার মিটার দৃশ্যমান থাকে।

যার ফলে অপরদিক থেকে আশা যানবাহনকে ঠিকমতো দেখা যায় না এবং এর ফলে দুর্ঘটনার আশঙ্কায় বেড়ে যায় শুধুমাত্র বেড়ে যায় বললে ভুল হবে দুর্ঘটনার সংখ্যা এই সময় অনেক বেশি হয়ে যায়।শুধুমাত্র যে সড়ক পরিবহনই সমসাগ্রস্ত হয় তা না বাংলাদেশের রেলওয়ে তথ্যমতে শীতকালে উত্তরাঞ্চলের ট্রেনের সময়সূচী ৩০ মিনিট থেকে ৯০ মিনিট বা আরো অধিক সময় পর্যন্ত পিছিয়ে দিতে হয় ঘন কুয়াশার কারণে রেলের লাইন ঠিকমতো দেখা যায় না যার ফলে ট্রেনটিকে ধীরে ধীরে গতি কমিয়ে গন্তব্য স্থানে নেওয়া যায় এবং বিমান চলাচলেও বিভিন্ন রকম সমস্যা অনুভত হয় ঘন কুয়াসার জন্য অনেক ফ্লাইট বাতিল করতে হয় । 

অতিথি পাখির আগমন ও প্রাকৃতিক ভারসাম্য

শীতকাল এর কুয়াশা যে শুধু অকল্যান বা ক্ষতিকর যে তা না এ রয়েছে প্রাকৃতিকগতভাবে এক অপরূপ সৌন্দর্য এবং এই সৌন্দর্যের কারণে আল্লাহ তায়ালার এক অশেষ রহমত বা অলৌকিক ঘটনায় বলা যায় প্রতিবছর শীতকালে উত্তরাঞ্চলের তিস্তা,  করোতোয়া,  আত্রাই,  মহানন্দা নদীর তীর ও বিল হাওরে শত শত প্রজাতির হাজার হাজার পাখি আসে এসব পাখি দের মধ্যে অন্যতম বেগুনি  হাঁস,  পাতিহাঁস,  গুটুর রাজহাঁস উল্লেখযোগ্য এই পাখিরা আসে সুদূর সাইবেরিয়া ,  মঙ্গোলিয়া,  চীনের ঠান্ডা অঞ্চল থেকে।

তারা শরীরের ভারসাম্য রক্ষা করে এবং স্থানীয় জীববৈচিত্র্যকে  সমৃদ্ধ করে প্রাকৃতিক বিদদের  মতে কুয়াশা পাখিদের জন্য আশ্রয়ের পরিবেশ তৈরি করে কারণ ঘন কুয়াশা এর জন্য শিকারিদের চোখে সহজে এসব প্রতিটি পাখিগুলো ধরা পড়ে না । তবে একটি দুঃখজনক ও শঙ্কা জনক কথা হচ্ছে যে ধীরে ধীরে জলাশা সুখে যাওয়া ও বিভিন্ন মানবীয় কার্যক্রমের জন্য পাখির সংখ্যা যাচ্ছে যা পরিবেশবিদদের এবং আমাদের পরিবেশ বৈচিত্র রক্ষায় বেশ উদ্বেগ জনক । 

সামাজিক ও মানবিক দিক

শীতের কারণে সামাজিক ও মানবিক  বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো এই শীতের সময় সক্রিয় হয়ে ওঠে গরম খাবার সরবরাহ,  শীত বস্ত্র বিতরণ ,  আশ্রয়হীনদের সহায়তা এসব উদ্যোগ মানবতার  উষ্ণ ছোঁয়া এনে দেয়।  শুধু যে স্বেচ্ছাসেবক সংগঠনগুলো কাজ করে তা কিন্তু নয় অনেকে ব্যক্তিগত উদ্যোগে অর্থাৎ সমাজের উঁচু শ্রেণীর লোকজন নিজ উদ্যোগে শীত বস্ত্র বিতরণ সহ আরো বিভিন্ন ধরনের কাজ করে থাকে যাতে গরিব শ্রেণীর মানুষরা যারা এই শীতে বেশ কষ্ট পাই তাদের কষ্ট কিছুটা লাঘব করা যায় ।

অনেকে আবার পাড়ায় পাড়ায় বাড়ি গিয়ে পুরনো শীত বস্ত্র যেগুলো সাধারণত ফেলে দেয় বা গরিব শ্রেণীর মানুষদের জন্য ধনী শ্রেণীর মানুষগুলো দান করে সেগুলো সংগ্রহ করে।  কিছু জিনিস স্পষ্টতা দেখা যায় যেমন মানবতার দেওয়াল তৈরি করা হয় যেখানে যে যার মত করে শীত বস্ত্র বা অন্যান্য পোশাক রেখে যাবে আর সেই দেওয়ালে যদি কারো কোন পোশাক প্রয়োজন হয় নিজ দায়িত্বে সে পোশাক নিয়ে যাবে । সমাজের এই মানবিকতা সত্যিই প্রশংসনীয়  রংপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের এক গবেষণায় দেখা গেছে শীতকালে স্থানীয় ছাত্র যুবক সংগঠনগুলোর প্রায় ৬৮% কোন না কোন স্বেচ্ছাসেবী কাজে যুক্ত হয়। 

এছাড়া স্থানীয় প্রশাসনও এখন ত্রাণসমূহ কর্মসূচির মাধ্যমে শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়ায় সরকারি তথ্যমতে সরকারি তথ্য অনুযায়ী গত বছর অর্থাৎ ২০২৪ সালের শীতে রংপুর বিভাগের ৮ লাখের বেশি কম্বল বিতরণ করা হয়। সমাজের এরকম মানবিক দিক আসলেই প্রশংসার দাবিদার আমার এই আর্টিকেল থেকে সেই সব লোককে ধন্যবাদ জানাই যারা শীতকালে এমন গুরুত্বপূর্ণ ও বেশ কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করে।

সংস্কৃতিক দিক ও ঐতিহ্য

শীতকালে উত্তরাঞ্চলের সংস্কৃতি এক বিশেষ আবহাওয়া নিয়ে আসে এই শীতকালে হেমন্তকাল অর্থাৎ  ইংরেজি ডিসেম্বর জানুয়ারি মাসের দিকে কৃষকদের নতুন ফসল ওঠে অর্থাৎ মাঠে মাঠে নতুন ফসল ঘরে তোলার জন্য কৃষকরা ব্যস্ত হয়ে পড়ে সাথে নতুন ফসল নিয়ে তাদের আনন্দ উচ্ছ্বাস যেন শীতকে হার মানায় ।হাড়ভাঙ্গা শীত পরাজিত হয় কৃষকদের এই আনন্দের কাছে ।

ঘরে ঘরে নতুন ফসল অর্থাৎ ধান এর বানানো বিভিন্ন পিঠা পায়েস প্রতি এলাকা মোও মোও করে যেন এক আনন্দের মেলা  বসেছে সব এলাকায় । শুধুমাত্র পিঠা পায়েস এই  যে সীমাবদ্ধ থাকে তা নয় গ্রামের ছেলেরা বিভিন্ন খেলাধুলা আয়োজন করে।  সাথে সাথে ঘন কুয়াশায় এবং শীত কে পরাজিত করার জন্য জায়গায় জায়গায় আগুন জ্বালিয়ে আগুনের তাপ গ্রহণ করা হয় । শীতের এই পিঠা উৎসব এর কথা বহু লোকসংগীতে কবিতায় ও গল্পে বারবার কবিরা লিখেছেন এবং সবাইকে জানিয়েছেন। 

স্বাস্থ্য ও পরিবেশগত বিশ্লেষণ

যেহেতু বাংলাদেশে গরমের সময় বেশি থাকে বছর জুরে  এবং উত্তরাঞ্চলে শীতের প্রকোপ অত্যন্ত বেশি হওয়ার কারণে দেখাতে বিভিন্ন ধরনের রোগ যার ফলে ঘন কুয়াশায় উত্তর অঞ্চলের শীতের আগমনী বার্তা শুধু দেয় তা নয় কিছু কিছু বিষয়ে এটাও বলা যায় যে ঘন কুয়াশায় উত্তর অঞ্চলে কিছু রোগের আগমনী বার্তা।  সে হিসেবে শ্বাসকষ্ট , হাঁপানি ,  নিউমোনিয়া ও কাশি জয়েন্ট পেইন্ট বা বাথরোগ চর্মরোগ ইনফ্লুয়েন্সা এরকম বিশেষ ধরনের রোগ গুলোর  প্রকোপ বেড়ে যায়।  বিশেষ করে পাঁচ বছরের শিশুর নিচে বা বৃদ্ধদের  মধ্যে রোগের প্রকোপটা বেশি দেখা যায়। 

এর কারণ হিসেবে বলা যায় ঘন কুয়াশার সূর্যের আলো কম পড়ে যার ফলে ভিটামিন ডি এর ঘাটতে দেখা দেয় যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমায়।  অন্যদিকে বায়ুতে ঠান্ডা হিমেল হওয়া বইতে থাকায় এসব রোগের প্রকোপটা আরো বাড়ে এবং শীতের সময় ধুলোবালি বাতাসের মধ্যে বেশি থাকে উষ্ণ হওয়ায় সাথে এ ধুলোবালি কণা ভাসতে থাকে যার ফলে শ্বাস প্রশ্বাসের সাথে কে ধুলাবালি কণা সবার মাঝে ঢুকে পড়ে।  ছোট বাচ্চারা এবং বৃদ্ধরা বয়স্ক বয়সের ভারের জন্য তাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকায় তারা ধুলোবালি করার সাথে যে জীবাণু শরীরের মাঝে যায় তা ঠিকমতো সহ্য করতে পারে না যার ফলে উপরোক্ত বিভিন্ন রোগ দেখা যায় শরীরের মাঝে। 

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে উত্তর অঞ্চলের শীতের ধরনের পরিবর্তন এসেছে একথা সবার জানা। আগে যেখানে ডিসেম্বর জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত কনকনে শীত থাকতো সেখানে এখন শীতের দিনের সংখ্যা অনেক কম । সেও  তো খুব একটা জোরালো পর্যায়ে যেতে পারে না বা যায় না আবহাওয়াবিদদের তথ্য অনুযায়ী গত ২০ বছরে উত্তরাঞ্চলে গড় শীতকাল প্রায় ২০ দিন কমে গেছে। আর এ কমে যাওয়ার ফলে বিভিন্ন জীববৈচিত্রের জীবনে পরিবর্তন এসেছে সাথে সাথে সামাজিক জীবনেও অনেক অনিয়ম ঘটে ওঠে ।

যেমন কৃষকরা তাদের  উৎপাদিত ফসল সঠিকভাবে রোপন এবং সেইসব ফসল ঘরে তোলা পর্যন্ত এই ব্ব্হইরি আবহাওয়াতে হয়ে ওঠে মাঝে মাঝে নাস্তানাবুত । তার কারণ স্বরূপ বলা যায় আগে নির্দিষ্ট সময়ে শীতের প্রকোপ দেখা যেত এখন অনেক সময়  আসতেও দেরি করে আবার সে যেতেও সময় নাই তার সঠিক কোন সময় বা টাইম নেই তাপমাত্রা উঠানামা বেশি হচ্ছে ফলে কৃষি উৎপাদিত পণ্য ও জীববৈচিত্র ওভাবে প্রবাহিত হচ্ছে। 

শেষ কথা

একদিকে প্রকৃতির নান্দনিক দৃশ্য অন্যদিকে বাস্তব জীবনে প্রতিচ্ছবি এটি জানিয়ে মানবিকতার পরিচয় প্রয়োজনীয়তা।  প্রকৃতি এই পরিবর্তনের মাঝে মানুষ যেমন সংগ্রাম করে তেমনি একে অপরের পাশে দাঁড়িয়ে উষ্ণতা ছড়িয়ে দেয়। 

ঘন কুয়াশা যেন শুধু শীতের প্রতীক নয়, এটি উত্তরের মাটির মানুষের ধৈর্য সহমর্মিত ও জীবনের প্রতিকূলতার প্রতিরোধের প্রতিচ্ছবি যুগে যুগে মানুষের এই সহমর্মিতা ও একে অপরের প্রতি দায়িত্ব যেন সামাজিক বন্ধন তৈরি করে দৃঢ় হবে ভাবে। 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

টাইম বিডি ২৪ নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url